পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচন (Bihar Assembly Election 2025) যত এগোচ্ছে, রাজনৈতিক পারদ ততই চড়ছে। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের আগে শনিবার পূর্ণিয়া, কাটিহার ও সুপৌলে টানা জনসভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর বক্তৃতার কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, মহাজোট এবং বিহারের সীমাঞ্চল রাজনীতি। তিনি সোজাসাপ্টা ঘোষণা করেন, “বিহারে রাহুল গান্ধীর দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচনে INDIA ব্লক নিশ্চিহ্ন হবে এবং NDA ২৪৩ আসনের মধ্যে ১৬০টির বেশি আসন পেয়ে সরকার গঠন করবে।”
রাহুল গান্ধীর ‘ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান’ মন্তব্যকে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, “ওই দোকান বিহারে আর চলবে না। মানুষ উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল সরকার চায়, নাটক নয়।” তাঁর বক্তব্যে বারেবারেই উঠে আসে লালু-রাবড়ি পর্বের ‘জঙ্গলরাজ’ প্রসঙ্গ এবং নীতীশ কুমারের উন্নয়নমূলক প্রশাসনের তুলনামূলক চিত্র।
সীমাঞ্চল অঞ্চলে কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে এনে শাহ দাবি করেন, “রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদব বিহারের সীমান্ত এলাকাকে অনুপ্রবেশকারীদের ঘাঁটি বানাতে চাইছেন। NDA সরকার ক্ষমতায় এলে এক একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হবে, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে এবং তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।” এই মন্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীরা এই বক্তব্যকে মেরুকরণের রাজনীতি বলে আক্রমণ করেছে, তবে NDA শিবির একে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন বলে ব্যাখ্যা করছে।
এদিন NDA-র হয়ে প্রচারে নামেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। রামগড়ের জনসভা থেকে তিনি স্পষ্ট করে দেন, “বিহারে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারই হবেন। NDA বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়বে এবং নীতীশের নেতৃত্বেই উন্নয়নের কাজ চলবে।” বিরোধীদের সেই বক্তব্য উড়িয়ে দেন, যেখানে বলা হচ্ছিল NDA জিতলেও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে রাখা হবে না।
রাজনাথ সিং তাঁর বক্তৃতায় লালু-রাবড়ি জমানার কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, “এক সময় বিহারে ‘জঙ্গলরাজ’ চলত। লোকজন বলত — বিহারে পা দিলেই মাথায় গুলি খেতে হয়। কিন্তু নীতীশ কুমার সেই ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছেন। আজ বিহার উন্নয়ন, রাস্তা, পরিকাঠামো এবং আইনশৃঙ্খলায় নতুন পরিচয় পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ভারতের ১৯৪৭-এর উন্নয়ন স্বপ্ন পূরণ করতে হলে বিহারের উন্নয়নও অপরিহার্য, আর তা একমাত্র NDA-র হাত ধরেই সম্ভব।
তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে সরাসরি আর্থিক হিসেবের আক্রমণ শানিয়ে রাজনাথ বলেন, “ওরা প্রতিটি পরিবারকে চাকরি দেবে বলছে। বিহারের বাজেট ৩ লক্ষ কোটি, কিন্তু চাকরির বেতন দিতেই লাগবে ১৩ লক্ষ কোটি। এই টাকা আসবে কোথা থেকে? মানুষকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত।” তিনি আরও ঘোষণা করেন, NDA সরকার ১০০টি কুটির শিল্প পার্ক, প্রতিরক্ষা করিডর তৈরি করবে, যেখানে সামরিক সরঞ্জাম, ক্ষেপণাস্ত্র ও কামান উৎপাদন হবে এবং লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
শুক্রবার পূর্ব চম্পারণের জনসভা থেকে নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “কেন্দ্র বারবার বিহারের উন্নয়নে সাহায্য করেছে, আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।” এর পরের দিনই পাল্টা প্রশংসা শোনা যায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মুখে। তিনি বলেন, “গত ২০ বছরে নীতীশ কুমার বিহারকে অন্ধকার থেকে উন্নয়নের আলোতে নিয়ে এসেছেন।”
ভোটের আগে NDA-র এই সর্বাত্মক আক্রমণাত্মক প্রচার, নীতীশকে সামনে রেখে উন্নয়নের বার্তা এবং বিরোধীদের প্রতিশ্রুতি ও অতীত প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলা— সব মিলিয়ে বিহারের রাজনৈতিক যুদ্ধ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। রাজ্যের জনতা কী রায় দেয়, সেটাই এখন নজরে রয়েছে গোটা দেশের।


