দিল্লি: লালকেল্লার (Red Fort car blast) মতো ঐতিহাসিক ও জনবহুল এলাকায় ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণকে ঘিরে ঘটনাপ্রবাহে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের অদূরে রেড সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি Hyundai i20 গাড়িতে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এমনই ছিল যে আশপাশের এলাকায় কেঁপে ওঠে, ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আকাশ, এবং মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন সাধারণ মানুষ।
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
ঘটনার পর দ্রুত দিল্লি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। বিস্ফোরণে গাড়িটির সম্পূর্ণ অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পাশাপাশি কাছাকাছি থাকা একাধিক গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায় ও স্থানীয় দোকান, মেট্রো প্রবেশপথের অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোটা এলাকাটি দ্রুত পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গভীর তদন্ত শুরু করেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিক, গোয়েন্দা বিভাগের প্রতিনিধিসহ একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার কর্তারা।
বৈঠক শেষে অমিত শাহ এক কঠোর বার্তায় বলেন, “এই হামলার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক অপরাধীকে খুঁজে বার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তদন্তে কোনও গাফিলতি সহ্য করা হবে না, কাউকে রেয়াত করা হবে না। দেশের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র যারা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, দেশের সন্ত্রাস দমনকারী শীর্ষ সংস্থা NIA (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)-কে এই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে এবং তারা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।
তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে যে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি নিবন্ধিত ছিল কাশ্মীরের চিকিৎসক ড. উমর উন নবী-র নামে। তিনি পূর্বে ফারিদাবাদে প্রকাশ্যে আসা একটি সন্ত্রাসী মডিউলের সঙ্গে যুক্ত দুই কাশ্মীরি চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ছিলেন বলে পুলিশের হাতে তথ্য এসেছে। সেই মডিউল ফাঁস হওয়ার সময় প্রায় ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছিল, যা গোটা দেশকে চমকে দিয়েছিল। এই সূত্র ধরেই লালকেল্লার বিস্ফোরণের সঙ্গে সন্ত্রাস যোগের সম্ভাবনা জোরদার হয়।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ পুলওয়ামা জেলার কোইল গ্রামে রাতভর অভিযান চালায়। সেখান থেকে ছ’জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে তিনজন ড. উমর উন নবীর পরিবারের সদস্য। তদন্তকারী আধিকারিকদের মতে, এই ঘটনাক্রম নিছক দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত নাশকতার অংশ। ড. উমর বেশ কিছুদিন ধরেই নিখোঁজ, এবং তার খোঁজে কাশ্মীরসহ দেশের একাধিক রাজ্যে অভিযান চলছে। গোয়েন্দারা তাঁর ফোন কলের রেকর্ড, আর্থিক লেনদেন, অনলাইন কার্যকলাপ এবং যোগাযোগের নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখছেন।
তদন্ত সংস্থার ধারণা, এটি বৃহত্তর একটি নেটওয়ার্কের অংশ এবং এর পেছনে আন্তঃরাজ্য সন্ত্রাসী চক্রের যোগ থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। ইতিমধ্যেই দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কাশ্মীরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, মেট্রো টার্মিনাল, জনবহুল বাজার, সীমান্তবর্তী এলাকা ও স্পর্শকাতর অঞ্চলে নজরদারি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি CRPF ও NSG কমান্ডোদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিস্ফোরণের উদ্দেশ্য, বিস্ফোরক ব্যবহারের ধরন, রিমোট ডিটোনেশন না টাইমার-ভিত্তিক ব্যবস্থা—সবকিছুই খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। NIA সূত্রে খবর, এটি একটি “টেরর অ্যাঙ্গেল” হতে পারে এবং হামলার সময়, স্থান ও পরিকল্পনা বার্তা দিচ্ছে যে এটি জনজীবনে আতঙ্ক ছড়াতেই করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এবং পর্যটনকেন্দ্রকে নিশানা করাই জঙ্গিদের লক্ষ্য হতে পারে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শাসক দল হোক কিংবা বিরোধী—সবপক্ষই এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস করা হবে না এবং দেশের অখণ্ডতা ও নাগরিক সুরক্ষায় যেকোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রশাসন ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং যে কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের হেল্পলাইনে জানানোর অনুরোধ করেছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই আরও বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দিল্লির এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ যে দীর্ঘমেয়াদি তদন্ত, শক্ত গোয়েন্দা নজরদারি ও কঠোর আইনি পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে কেন্দ্র এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো।


