নয়াদিল্লি: কাশ্মীর উপত্যকায় সদ্যসমাপ্ত ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত তিন জঙ্গির পরিচয় ঘিরে উত্তপ্ত হল লোকসভা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “তিনজনই পাকিস্তানি। এবং তাদের পরিচয় সম্পর্কে ভারতের কাছে অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ রয়েছে।” শুধু তা-ই নয়, তিনি প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কড়া বিরোধিতা করে বলেন, “পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দেওয়ার দায়ভার কংগ্রেসই নিচ্ছে।”
সোমবার শ্রীনগরের দাচিগামে ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত তিন জঙ্গিকে নিয়ে রাজনীতির ঝড় ওঠে, যখন চিদাম্বরম প্রশ্ন তোলেন, “সরকার কি নিশ্চিত যে ওরা পাকিস্তান থেকে এসেছে? ওরা তো স্থানীয়ও হতে পারে। সরকার কী প্রমাণ দিচ্ছে?”
এদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহের প্রত্যুত্তর ছিল দৃঢ়, “পাহেলগাঁও হামলার সঙ্গে ওরা যুক্ত ছিল। এদের দু’জনের পাকিস্তানি ভোটার নম্বর আমাদের হাতে এসেছে। ওদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া চকোলেট পর্যন্ত পাকিস্তানে তৈরি। আরও কী প্রমাণ দরকার?”
এরপরই চিদাম্বরমের উদ্দেশে তাঁর তীব্র কটাক্ষ, “আপনি কী লাভ করছেন পাকিস্তানকে আড়াল করে? আপনি কি ওদের সাফাই দিতে চাইছেন? দেশ জানতে চায়, পাকিস্তানের হয়ে সাফাই দিয়ে আপনি কী বার্তা দিতে চাইছেন?”
অমিত শাহের বক্তব্যে আরও একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা ছিল:
- এই তিন জঙ্গিই ২২ এপ্রিলের পাহেলগাঁও হামলার মূল অভিযুক্ত।
- তাদের পরিচয় ও সংযোগসম্পর্কিত “বহুস্তর প্রমাণ” সরকারের হাতে রয়েছে।
- “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আপসহীন। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য কেউ যদি দেশের শত্রুদের রক্ষা করে, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
চিদাম্বরমের বক্তব্য ও তৎপরতার সঙ্গে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলে দেন বিজেপি সাংসদরাও। তাঁদের দাবি, নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভাজনের কোনও স্থান নেই।
অমিত শাহের এই মন্তব্য শুধু সংসদের ভেতর রাজনৈতিক চর্চা তৈরি করেনি, তা এখন জাতীয় নিরাপত্তা-সংলগ্ন নীতিগত অবস্থান নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলেছে। চিদাম্বরমের মতো অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মন্তব্যকে বিজেপি ব্যবহার করছে “পাকিস্তান-পরাস্ত নরমপন্থা” হিসেবে চিহ্নিত করতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বিজেপির অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক মূলধন। সেই প্রেক্ষিতে বিরোধী মন্তব্যকে কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান রাজনৈতিকভাবে পূর্বপরিকল্পিতও হতে পারে।