নয়াদিল্লি: দেশের জনসংখ্যা-রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা ঘিরে ফের উতপ্ত বিতর্ক। নয়াদিল্লিতে ‘জাগরণ সাহিত্য সৃজন সম্মান’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার দাবি করেন, ভারতের মুসলিম জনসংখ্যার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা প্রাকৃতিক বৃদ্ধির ফল নয়, মূলত এটা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের ফলশ্রুতি।
নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার কাদের?
শাহ বলেন, “ভারতের মাটিতে কারা প্রকৃত শরণার্থী আর কারা অনুপ্রবেশকারী, সেই সীমারেখা স্পষ্টভাবে টানা জরুরি। যাঁরা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে এই দেশে আশ্রয় খুঁজেছেন, তাঁদের নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার। কিন্তু যারা কেবল আর্থিক স্বার্থে বা অন্য উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করছে, তাদের প্রতি দেশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যায় লক্ষণীয় পরিবর্তন Amit Shah on Muslim Population
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত ছয় দশকে দেশের ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যায় লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫১ সালে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত ছিল প্রায় ৮৪ শতাংশ, যা ২০১১ সালে নেমে এসেছে ৭৯ শতাংশে। অন্যদিকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ থেকে ১৪.২ শতাংশে। শাহের বক্তব্যে, “এই বৃদ্ধি জন্মহারের কারণে নয়, এর মূলে রয়েছে সীমান্তপথে সংগঠিত অনুপ্রবেশ।”
অবৈধ অনুপ্রবেশ
তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ সীমান্তবর্তী একাধিক জেলায় মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা তাঁর মতে “অবৈধ অনুপ্রবেশের অকাট্য প্রমাণ।”
অমিত শাহ তাঁর বক্তব্যে নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, অর্থাৎ CAA-র ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “১৯৪৭ সালের ধর্মভিত্তিক দেশভাগের ফলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে থেকে যাওয়া সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের সুরক্ষা দেওয়া ভারতের নৈতিক দায়িত্ব।”
পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা
শাহ জানান, পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা ১৯৫১ সালের ১৩ শতাংশ থেকে আজ কমে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশেরও নিচে, আর বাংলাদেশে তা ২২ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৮ শতাংশের কমে। সেই প্রেক্ষিতেই তাঁর মন্তব্য, “যতটা অধিকার আমার এই দেশের মাটিতে, ঠিক ততটাই অধিকার পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হিন্দুদেরও এই মাটিতে।”
তিনি আরও বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে সরকার “Detect, Delete, and Deport”— অর্থাৎ শনাক্ত, নাম বাদ ও দেশছাড়া— নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। শাহের স্পষ্ট বক্তব্য, “ভারত কোনও ধর্মশালা নয়। যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে, তারা কেবল প্রশাসনিক নয়, গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্যও হুমকি।”
অমিত শাহের এই মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই তরঙ্গ উঠেছে। বিজেপি বলছে, এটি “জাতীয় নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্য রক্ষার বার্তা”; আর বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, “জনসংখ্যা ও ধর্মকে অস্ত্র করে বিভাজনের রাজনীতি জিইয়ে রাখার নতুন কৌশল।”