কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit-Shah) বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নতুন বই ‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরিজ – ইয়ার্স দ্যাট ফোর্জড আ লিডার’ প্রকাশ উপলক্ষে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময়ে মোদীর সংগ্রামের অজানা গল্প তুলে ধরেন। তিনি জানান, তৎকালীন ২৪-২৫ বছর বয়সী মোদী সাধু, সর্দার, হিপ্পি ধূপকাঠি বিক্রেতা ও সংবাদপত্র হকারের ছদ্মবেশে গোপন কার্যকলাপ পরিচালনা করেছিলেন।
শাহ (Amit-Shah) আরও বলেন, মোদী জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে গোপন সংবাদপত্র বিতরণ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা আইনের (মিসা) অধীনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই বই প্রধানমন্ত্রীর সেই তরুণ বয়সের সংগ্রামের একটি জীবন্ত দলিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জরুরি অবস্থায় মোদীর ভূমিকা
অমিত শাহ (Amit-Shah) বলেন, “‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরিজ’ বইটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ১৯ মাসব্যাপী জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনের গল্প তুলে ধরেছে। তিনি মিসা-র অধীনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেন এবং তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।” তিনি আরও বলেন, “সেই সময়ে বহু গোপন সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো।
মোদী (Amit-Shah) সেগুলো বাজারে, ছাত্র এবং মহিলাদের মধ্যে বিতরণ করতেন। গুজরাটে তিনি সাধু, সর্দারজি, হিপ্পি বা সংবাদপত্র বিক্রেতার ছদ্মবেশে কাজ করতেন।” শাহ জানান, এই বইটি তরুণ মোদীর সাহস ও নিষ্ঠার একটি অসাধারণ নথি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ভারতে জরুরি অবস্থা জারি ছিল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক অধিকার স্থগিত করেছিল। মোদী, (Amit-Shah) তখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন তরুণ প্রচারক হিসেবে, এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
‘ঐশ্বরিক বিচার’ ও রাজনৈতিক বার্তা
অমিত শাহ (Amit-Shah) ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির জয়কে ‘ঐশ্বরিক বিচার’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “যে ২৫ বছরের তরুণ ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, তিনিই ২০১৪ সালে জরুরি অবস্থার মূল কারণ—বংশবাদী রাজনীতি—কে উৎখাত করেছেন।” শাহ আরও বলেন, “যে যুবক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন, তিনি আজ দেশের গণতন্ত্রের শিকড়কে শক্তিশালী করছেন।”
বইয়ের তাৎপর্য
ব্লুক্রাফট প্রকাশিত ‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরিজ – ইয়ার্স দ্যাট ফোর্জড আ লিডার’ বইটি মোদীর সহযোগীদের অভিজ্ঞতা এবং সংরক্ষিত নথির উপর ভিত্তি করে রচিত। এটি একটি তরুণ নেতার গঠনমূলক বছরগুলোর উপর নতুন আলোকপাত করে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, যিনি নিজেও জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনের একজন প্রবীণ নেতা।
প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স-এ একাধিক পোস্টে বইটি সম্পর্কে বলেন, “‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরিজ’ আমার জরুরি অবস্থার সময়কার যাত্রার কথা তুলে ধরে। এটি সেই সময়ের অনেক স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। আমি সকলকে, যাঁরা জরুরি অবস্থার সেই অন্ধকার দিনগুলোর সাক্ষী বা যাঁদের পরিবার তখন কষ্ট পেয়েছে, তাঁদের অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি ১৯৭৫-১৯৭৭ সালের লজ্জাজনক সময় সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন তরুণ আরএসএস প্রচারক হিসেবে, জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলন আমার জন্য একটি শিক্ষার অভিজ্ঞতা ছিল। এটি আমাকে গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়েছিল। আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ব্লুক্রাফট ডিজিটাল ফাউন্ডেশন এই অভিজ্ঞতাগুলো বই আকারে সংকলন করেছে, যার ভূমিকা লিখেছেন শ্রী এইচ ডি দেবগৌড়া।”
রিলায়েন্সের শেয়ার চড়ল, সিটি রিসার্চ দিল উচ্চ টার্গেট
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অমিত শাহের (Amit-Shah) এই বক্তৃতা এমন সময়ে এসেছে যখন বিজেপি জরুরি অবস্থার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ পালন করছে। এই প্রেক্ষাপটে মোদীর বই প্রকাশ বিজেপির জন্য একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যা কংগ্রেসের বংশবাদী রাজনীতি এবং জরুরি অবস্থার সমালোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরে।
‘দ্য ইমার্জেন্সি ডায়েরিজ’ বইটি কেবল মোদীর ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্পই নয়, এটি ভারতের গণতন্ত্রের একটি অন্ধকার অধ্যায়ের ঐতিহাসিক নথি। অমিত শাহের (Amit-Shah) বক্তৃতা এবং মোদীর বার্তা তরুণ প্রজন্মকে জরুরি অবস্থার শিক্ষা এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করার একটি প্রচেষ্টা। এই বই ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।