নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ (amit-shah) দেশের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। গৃহ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, (amit-shah) শাহ দেশে বন্যার হুমকি কমাতে গৃহীত দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপগুলিও পর্যালোচনা করেছেন। এদিকে, অসমে বন্যা ও ভূমিধসে রবিবার আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে এ বছরের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৬-এ পৌঁছেছে।
অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ASDMA) রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত বন্যায় ২০ জন এবং ভূমিধসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার কামরূপ জেলার কমলপুর এলাকায় বন্যার জলে ডুবে তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। বর্তমানে, হাইলাকান্দি, শ্রীভূমি, মরিগাঁও, কামরূপ, গোয়ালপাড়া, কাছাড়, নাগাঁও, কামরূপ (মেট্রো), দরাং, লখিমপুর এবং গোলাঘাট সহ ১১টি জেলায় প্রায় ২.৬০ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে রয়েছে।
একইভাবে, সিকিমে টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধস, কাদা প্রবাহ, আকস্মিক বন্যা এবং পাথর ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি, লাচুং এবং লাচেন উপত্যকা থেকে ১,৬০০-র বেশি পর্যটককে সড়কপথে উদ্ধার করা হয়েছে।
এই পর্যটকদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুরাও ছিলেন, যারা দুর্গম ভূখণ্ড এবং মাঝে মাঝে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। সিকিম সরকার (amit-shah) মঙ্গান জেলায় ২৮ মে থেকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০০৫-এর ধারা ২২(২)(বি) অনুযায়ী “দুর্যোগ” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মণিপুরে, (amit-shah) টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ইম্ফালের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (JNIMS) ক্যাম্পাসে তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে আটকে পড়া মেডিক্যাল ছাত্র এবং কর্মীদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, অসম রাইফেলস, রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (SDRF), জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী (NDRF) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেছে।
এর আগে, ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং এবং মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় ভাল্লার সঙ্গে কথা বলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যার পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
অসমে বন্যা ও ভূমিধসের প্রভাব
অসমে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১১টি জেলায় প্রায় ২.৬০ লক্ষ মানুষ বন্যার কবলে রয়েছে(amit-shah)। ব্রহ্মপুত্রা এবং এর উপনদীগুলির জলস্তর বিপদসীমা অতিক্রম করায় ৯৬৮টি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। বর্তমানে ১৩৪টি ত্রাণ শিবির এবং ৯৪টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে ১৭,৬৬১ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
এ বছর বন্যা, ভূমিধস এবং ঝড়ের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭-এ পৌঁছেছে, এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে। কামরূপ জেলার চায়গাঁও এলাকায় জাতীয় মহাসড়ক-১৭-এর একটি অংশ জলমগ্ন হয়েছে, এবং জোরহাট ও মাজুলির মধ্যে ফেরি পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। ধলেশ্বরী, রুকনি, কাটাখাল, বরাক, বুড়িদেহিং, কুশিয়ারা, ধানসিরি এবং কপিলি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিকিমে ভূমিধস ও দুর্যোগ
সিকিমে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে মঙ্গান জেলায় ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে। তিস্তা নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্কালাং বাঁশের সেতু ভেঙে পড়েছে, যা দজোঙ্গু নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল।
সম্প্রতি, উত্তর সিকিমের (amit-shah) বিভিন্ন অংশে আটকে পড়া প্রায় ১,৫০০ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গান জেলায় একটি গাড়ি তিস্তা নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় একজন নিহত, দুজন আহত এবং আটজন নিখোঁজ রয়েছে। সিকিমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জনগণকে নদী এবং ভূমিধস-প্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
মণিপুরে বন্যা ও উদ্ধার অভিযান (amit-shah)
মণিপুরে (amit-shah) ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ইম্ফাল পূর্ব এবং পশ্চিম জেলায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা এবং ভূমিধস দেখা দিয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩,৮০২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৮৮৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইম্ফাল পূর্বের খুরাই, হেইঙ্গাং এবং চেকন এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অসম রাইফেলস ইম্ফাল পূর্বে ৮০০-র বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছে এবং অস্থায়ী পায়ে হাঁটা সেতু নির্মাণ করেছে। মণিপুরের রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লা এবং মুখ্য সচিব প্রশান্ত কুমার সিং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ
অমিত শাহ’র (amit-shah) সভাপতিত্বে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জলশক্তি মন্ত্রী সি আর পাটিল, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জল সম্পদ, নদী উন্নয়ন, পৃথিবী বিজ্ঞান, পরিবেশ, পরিবহন, রেলওয়ে বোর্ড, এনডিএমএ, এনডিআরএফ এবং আইএমডি-র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শাহ (amit-shah) ব্রহ্মপুত্রার জল সংরক্ষণের জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৫০টি বড় পুকুর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কৃষি, সেচ এবং পর্যটনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি আইএসআরও-র স্যাটেলাইট চিত্রের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বন্যা পূর্বাভাস সিস্টেম আপগ্রেড করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ৩ জুন অসম, সিকিম এবং মণিপুরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রের সম্পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে অসমের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে রাজ্য সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেছি।”
দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রয়োজন
অসম, সিকিম এবং মণিপুরে বন্যা ও ভূমিধসের পুনরাবৃত্তি ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা তুলে ধরে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার ধরণ অনির্দেশ্য হয়ে উঠেছে, এবং ব্রহ্মপুত্রা অববাহিকায় বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে। অমিত শাহ বন্যা পূর্বাভাস সিস্টেম আপগ্রেড করা, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে রাস্তা নির্মাণের নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং বাঁধের ফ্লাডগেটগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এনডিএমএ-কে সিকিম এবং মণিপুরের সাম্প্রতিক বন্যার বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
উত্তর-পূর্ব ভারতে বন্যা ও ভূমিধস একটি বার্ষিক সমস্যা, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করে। অমিত শাহ’র (amit-shah) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর হস্তক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
NPS-এ বিনিয়োগ করলে কীভাবে আপনার অবসরকালীন জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে? জানুন বিস্তারিত
তবে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। অসম, সিকিম এবং মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি জরুরি আহ্বান।