অমিত শাহ (Amit Shah) ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কার্যরত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। ২,২৫৮ দিন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি লাল কৃষ্ণ আডবাণীর ২,২৫৬ দিনের মেয়াদকে অতিক্রম করেছেন। এর আগে, ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল ১,২১৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
অমিত শাহের এই কৃতিত্ব ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাহসী ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএ সংসদীয় দলের বৈঠকে শাহের এই অসাধারণ অবদানের প্রশংসা করেছেন।
অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়কালে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি হল জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল। এই সিদ্ধান্ত দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে ভারতের মূলধারার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করেছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয় এবং এটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়, যা সেখানকার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।এছাড়াও, অমিত শাহের মেয়াদে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) এবং অবৈধ কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)-এর মতো আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনে সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীগুলি আরও সুসংগঠিত এবং কার্যকর হয়ে উঠেছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নাক্সালবাদের মতো হুমকি মোকাবিলায় তাঁর দৃঢ় নীতি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এনেছে।
শাহের নেতৃত্বে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলির নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের ভারতে নাগরিকত্ব প্রদানের পথ সুগম করেছে। এই আইনটি ভারতের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তবে, এই আইন নিয়ে বিতর্কও হয়েছে, এবং শাহ এই বিতর্ক মোকাবিলায় দৃঢ়তার সঙ্গে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।এছাড়াও, অমিত শাহের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের পুলিশ বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (সিএপিএফ) আধুনিকীকরণের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীগুলিকে আরও দক্ষ করা হয়েছে।
তিনি সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, যা আধুনিক যুগে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কৌশল এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এনডিএ সংসদীয় দলের বৈঠকে অমিত শাহের এই অবদানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেছেন যে শাহের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শাহের প্রশাসনিক দক্ষতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে ভারতের অন্যতম শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
SIR নিয়ে তৃণমূলের কড়া প্রস্তুতি, আজ দলের বৈঠকে চূড়ান্ত রূপরেখা দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
অমিত শাহের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা এবং জনকল্যাণমুখী নীতি প্রণয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর দীর্ঘ মেয়াদ এবং কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাঁকে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একজন অসাধারণ নেতা হিসেবে স্থান দিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে ভারত আরও নিরাপদ এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে।