নিবন্ধন ছাড়াও বৈধ হিন্দু বিবাহ নিশ্চিত

প্রয়াগরাজ: “বিবাহ নিবন্ধনের অনুপস্থিতি বিয়েকে অবৈধ করে না”—আলাহাবাদ হাই কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল। হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ (Hindu Marriage Act, 1955)-এর…

নিবন্ধন ছাড়াও বৈধ হিন্দু বিবাহ নিশ্চিত

প্রয়াগরাজ: “বিবাহ নিবন্ধনের অনুপস্থিতি বিয়েকে অবৈধ করে না”—আলাহাবাদ হাই কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল। হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ (Hindu Marriage Act, 1955)-এর আওতায় সম্পন্ন হওয়া বিবাহের ক্ষেত্রে নিবন্ধন সনদের অনুপস্থিতি নিয়ে বহু বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে আদালত জানিয়েছে যে, নিবন্ধন মূলত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য হলেও এটি বিয়ের বৈধতা নির্ধারণের একমাত্র শর্ত নয়।

গত ২৬ আগস্ট প্রকাশিত আদেশে বিচারপতি মানীশ নিগম (Justice Manish Nigam) বলেন, “যখন কোনও হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী যথাযথ রীতি মেনে সম্পন্ন হয়, তখন সেই বিবাহের প্রমাণ সহজতর করতে রাজ্য সরকারকে নিবন্ধন সংক্রান্ত নিয়ম তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে শুধুমাত্র রেজিস্ট্রিতে বিবাহের এন্ট্রি না হওয়ার কারণে কোনও বিবাহ অবৈধ হয়ে যাবে না।” আদালত আরও স্পষ্ট জানিয়েছে, রাজ্য সরকার বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের নিয়ম প্রণয়ন করলেও নিবন্ধনের অভাবে বিবাহকে অবৈধ ঘোষণা করার ক্ষমতা নেই।

   

এই মামলার মূল আবেদনকারী সুনীল দুবে (Sunil Dubey) ও তাঁর স্ত্রী ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহবিচ্ছেদের (Divorce by Mutual Consent) আবেদন করেছিলেন। আজমগড় জেলার পারিবারিক আদালত (Family Court) ২০২৫ সালের ৪ জুলাই একটি নির্দেশে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের বিবাহ নিবন্ধন সনদ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আবেদনকারী পক্ষ আদালতে জানায় যে তাঁদের বিবাহ নিবন্ধন সনদ পাওয়া যায়নি এবং হিন্দু বিবাহ আইনে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তাই সনদ জমা দেওয়া থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হোক। এই আবেদনটি স্ত্রী পক্ষও সমর্থন করেছিলেন।

কিন্তু পারিবারিক আদালত ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এরপরই সুনীল দুবে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।

Advertisements

হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, দেশের সুপ্রিম কোর্ট ও বিভিন্ন হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী, বিবাহ নিবন্ধন সনদ শুধুমাত্র প্রমাণের জন্য একটি মাধ্যম। হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-এর ধারা ৮(৫)-এ বলা হয়েছে, নিবন্ধনের অভাবে বিবাহের বৈধতা নষ্ট হবে না। আদালত আরও মন্তব্য করে যে, রাজ্য সরকারকে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণসহ বিবাহের বিবরণ নথিভুক্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রমাণ সরবরাহ করা।

এই রায় আইনজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেশে প্রায়ই দেখা যায় বিবাহ বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার বা অন্যান্য আইনি বিষয়ে প্রমাণ হিসেবে বিবাহ নিবন্ধন সনদ জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই বিবাহ নিবন্ধন সনদ না থাকায় মানুষ সমস্যায় পড়েন। এই রায় জানিয়ে দিল যে বিবাহের বৈধতা শুধুমাত্র আইনানুগ রীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার উপর নির্ভরশীল, সনদের উপর নয়।

আইনজীবী মহলের মতে, এই রায় একদিকে বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে খর্ব করছে না, বরং এটিকে প্রমাণ হিসেবে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে। একইসঙ্গে বহু সাধারণ মানুষ যারা নিবন্ধনের অভাবে ভুগছেন তাঁদের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির খবর। আদালতের বক্তব্য অনুযায়ী, বিবাহ আইন অনুযায়ী সঠিক রীতি-নীতি মেনে সম্পন্ন হলেই বিবাহ বৈধ হবে।