এলাহাবাদ হাইকোর্ট(Allahabad High Court) সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ রায়তে বলেছে, বিবাহ কোনোভাবেই স্বামীকে তার স্ত্রীর ওপর মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয় না। আদালত এটি স্পষ্ট করেছে যে, স্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, গোপনীয়তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা তার মৌলিক অধিকার এবং বিবাহ সম্পর্কের সীমা অতিক্রম করলে তা আইনি দায়িত্বের অধীনে পড়ে।
কোর্টের এই মন্তব্য মহিলাদের গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতার অধিকার সংক্রান্ত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। মামলাটি সংশ্লিষ্ট একটি অভিযুক্ত স্বামী, প্রদ্যুম্ন যাদবের বিরুদ্ধে ছিল, যিনি তার স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই তাদের যৌন সম্পর্কের একটি গোপন ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। তার বিরুদ্ধে আইটি অ্যাক্টের ৬৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারক বিনোদ দিওয়াকার এই মামলার শুনানিতে বলেছেন, “বিবাহিত সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং সম্মান রক্ষা করবেন, বিশেষ করে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে।” তিনি আরও বলেছেন “এমন ধরনের ভিডিও শেয়ার করা স্ত্রীর গোপনীয়তা এবং সম্পর্কের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, যা বিবাহের মৌলিক ভিত্তিকে বিপন্ন করে।”
বিচারক আরও উল্লেখ করেছেন, “একজন স্ত্রী তার স্বামীর এক্সটেনশন নয়, তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তি যার নিজস্ব অধিকার, ইচ্ছা এবং সংস্থা রয়েছে। তার শারীরিক স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার সম্মান শুধু আইনি দায়িত্বই নয়, এটি একটি নৈতিক দায়িত্বও বটে, যা একটি সমান সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।”
মামলার ঘটনা অনুযায়ী মির্জাপুর জেলার একটি গ্রামে প্রদ্যুম্ন যাদব তার স্ত্রীকে অবগত না করেই তাদের যৌন সম্পর্কের একটি ভিডিও ধারণ করেন এবং সেটি ফেসবুকে আপলোড করেন। এরপর সেই ভিডিওটি তিনি তার স্ত্রীর মামা ও গ্রামের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন।
অভিযুক্তের পক্ষে তার আইনজীবী এই যুক্তি তোলেন যে, যেহেতু অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী বৈধভাবে বিবাহিত, সুতরাং আইটি অ্যাক্টের ৬৭ ধারায় তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ দাঁড়ায় না। এছাড়া তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে আপসের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরকারের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট এই যুক্তি গ্রহণ করেননি। তিনি জানান “স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে এই ধরনের গোপন ভিডিও ধারণ ও শেয়ার করার কোন অধিকার স্বামীকে নেই, কারণ এটি স্ত্রীর সম্মতি ও স্বাধীনতার প্রতি সরাসরি আক্রমণ।”
এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় সমাজে মহিলাদের অধিকার এবং গোপনীয়তার বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করেছে। এটা প্রমাণ করেছে যে, বিবাহের সম্পর্ক সত্ত্বেও স্ত্রীর ব্যক্তিগত মর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যে কেউ এটি লঙ্ঘন করলে তা আইনি দায়িত্বে পড়ে।
এই রায় শুধু আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান এবং তাদের গোপনীয়তার প্রতি জনগণের মনোভাবের উপরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।