অমরাবতী: বঙ্গোপসাগরে ক্রমেই তীব্র রূপ নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’। তার দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী জেলা ও পরিবহণ ব্যবস্থা। মঙ্গলবার একদিনে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরের (Visakhapatnam Airport) বিমান চলাচল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদিন মোট ৩২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরের অধিকর্তা এন পুরুষোত্তম জানিয়েছেন, ‘‘সাধারণত আমরা প্রতিদিন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করি। কিন্তু আজ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কোনও উড়ানই চালানো সম্ভব হয়নি।’’ তিনি আরও জানান, সোমবার দু’টি এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট বাতিল হলেও, বাকি ফ্লাইটগুলো সেই দিন স্বাভাবিকভাবে চলেছিল।
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়ার দ্রুত অবনতি হওয়ায় সমস্ত ফ্লাইট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (AAI)-র নির্দেশিকা মেনে ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শুধু বিশাখাপত্তনম নয়, প্রভাব পড়েছে বিজয়ওয়াড়া এবং তিরুপতি বিমানবন্দরেও। বিজয়ওয়াড়া বিমানবন্দরের অধিকর্তা লক্ষ্মীকান্ত রেড্ডি বলেন, ‘‘আজ মোট ১৬টি উড়ান বাতিল হয়েছে। তবে ৫টি ফ্লাইট সীমিতভাবে চালানো সম্ভব হয়েছে।’’ তিনি জানান, সোমবার কেবলমাত্র একটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল, কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ঝড়ের গতিবেগ বাড়ায় বাকি বিমানগুলির পরিষেবা বাতিল করতে হয়েছে।
তিরুপতি বিমানবন্দরেও চারটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান চলাচলের পাশাপাশি রেল পরিষেবাতেও বড় প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’-র। দক্ষিণ-মধ্য রেলওয়ে (SCR)-এর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সোমবার ও মঙ্গলবার মিলিয়ে প্রায় ১২০টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে একাধিক রেলপথে সাময়িক পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
রেলওয়ে যাত্রীদের জানানো হয়েছে, যাত্রার আগে রেলওয়ে হেল্পলাইন বা অনলাইন অ্যাপ থেকে পরিষেবার আপডেট জেনে নিতে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা উপকূলে ল্যান্ডফল করবে।
এখনও পর্যন্ত বিশাখাপত্তনম, শ্রীকাকুলাম, পূর্ব গোদাবরী এবং বিজয়নগরম জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ৮০–১০০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সমুদ্র উপকূলে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও রয়েছে।
রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দল (SDRF) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোতে এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলতে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ আরও কয়েক ঘণ্টা ধরে তীব্র থাকবে। ফলে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিমান ও রেল পরিষেবায় আংশিক বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা রয়ে গেছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিমানবন্দর ও রেল কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয়েছে।



