হোলি নিয়ে মোদীকে চিঠির হুঁশিয়ারি আলিগড়ের ছাত্রদের

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (AMU) হোলি মিলন উৎসব পালনের অনুমতি না পাওয়ায় বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্ররা। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তুলে ধরার হুঁশিয়ারিও দেয়…

Aligarh Students Threaten to Write to Modi Over Holi Celebration Denial

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে (AMU) হোলি মিলন উৎসব পালনের অনুমতি না পাওয়ায় বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন ছাত্ররা। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তুলে ধরার হুঁশিয়ারিও দেয় তারা। এরপরেই শুরু হয় বিতর্ক।

হোলি খেলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে কিছু ছাত্রের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা অভিযোগ তুলেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্য করছে। অনুমতি না পেলে, তারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে জানানোর কথা বলে।

kolkata24x7-sports-News

   

AMU-র স্নাতকোত্তরের ছাত্র অখিল কৌশল ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হোলি মিলন উৎসবের অনুমতির জন্য আবেদন করেন। হিন্দু ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ওয়াসিম আলির কাছে উপাচার্যের উদ্দেশে একটি চিঠি জমা দেওয়া হয়। ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের NRSC ক্লাবে হোলি মিলন অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয়।

অখিল কৌশল জানান, ‘আমাদের কাছে ওই মিটিংয়ের অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিং রয়েছে। যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তবে আমরা সেই রেকর্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘AMU-তে অন্যান্য ধর্মের অনুষ্ঠান হয়, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে হিন্দু ছাত্রদের হোলি মিলন অনুষ্ঠান করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই AMU-কে মিনি ইন্ডিয়া বলেছেন। ভারত সব ধর্মকে সম্মান জানায়। তাই উপাচার্য নাইমা খাতুনেরও সব ধর্মের প্রতি সমান সম্মান দেখানো উচিত।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর ওয়াসিম আলি জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ‘আগেও ছাত্ররা হোলি পালন করেছেন, তবে নির্দিষ্ট জায়গায় বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য কখনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। ছাত্ররা হোস্টেল বা ক্যাম্পাসে হোলি খেলতে পারেন, কিন্তু কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হবে না।’

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন। অল ইন্ডিয়া করনি সেনা এই বিষয়ে প্রতিবাদ মিছিলও করেছে। মিছিলে ‘AMU-র একনায়কতন্ত্র চলবে না’ স্লোগান ওঠে। করনি সেনার সদস্যরা বলেন, AMU-তে সব ধর্মের উৎসব সমানভাবে পালনের অনুমতি দেওয়া উচিত।

এদিকে, সমাজবাদী পার্টির নেতা অশুতোষ ভার্মা বলেন, ‘কেউ যেন উৎসব পালনে বাধা না পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এক ধর্মের উৎসব পালনের অনুমতি থাকে, তবে অন্য ধর্মের উৎসবেও সমান সুযোগ থাকতে হবে।’

উত্তরপ্রদেশের পর্যটনমন্ত্রী জয়বীর সিং জানান, ‘যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন করে এবং অন্য ধর্মের উৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।’

এই বিতর্কের মধ্যে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। বহু ছাত্র ও সংগঠনের নেতারা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলন করছেন। তাদের মতে, AMU-তে সব ধর্মের উৎসব পালনের সমান অধিকার থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা নিয়ে জনমত বিভক্ত। অনেকেই মনে করছেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হোলি মিলন উৎসবের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করবে। অন্যদিকে, কিছু ছাত্ররা মনে করছেন, এটি তাদের ধর্মীয় অধিকারকে লঙ্ঘন করার চেষ্টার অংশ।