বিল্ডিং ১৭, রুম নম্বর ১৩: আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলেই হয়েছিল সন্ত্রাসের ছক

Al-Falah University Terror Cell

একটা সাধারণ, স্যাঁতসেঁতে ঘর। হারিয়ানার ফারিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল বিল্ডিং ১৭-এর রুম নম্বর ১৩। আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ সেই ঘরই এখন তদন্তকারীদের বিশেষ নজরে। এখানেই নাকি গোপনে তৈরি হয়েছিল দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ কাঁপানো একাধিক সন্ত্রাস হামলার ছক।

Advertisements

‘হোয়াইট কলার’ টেরর মডিউল

তদন্তে উঠে এসেছে, এই ঘর থেকেই পরিচালিত হচ্ছিল ‘হোয়াইট কলার’ টেরর মডিউল—যেখানে সদস্যরা কেউ ডাক্তার, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাশ্মীরের চিকিৎসক ড. উমর নবি—যিনি সোমবার দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত। সেই বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন।

   

আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল, যেটিতে এই তিন চিকিৎসকই কর্মরত ছিলেন, এখন জাতীয় তদন্ত সংস্থার নজরে। একদিন আগেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক কর্মী ড. মুজাম্মিল শাকিলের ভাড়াটে বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২,৯০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল। পাশাপাশি ধরা পড়েছেন ড. শাহিন শহিদ—যিনি পাকিস্তান-ভিত্তিক জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা গঠনের দায়িত্বে ছিলেন বলে সন্দেহ। উমর বিস্ফোরণে মারা গেলেও মুজাম্মিল ও শাহিন এখন পুলিশ হেফাজতে। অন্যদিকে কাশ্মীরের আরও এক চিকিৎসক ড. নিসার-উল-হাসান নিখোঁজ।

রাসায়নিক পদার্থ এনে রাখা হচ্ছিল রুম নম্বর ১৩-তে Al-Falah University Terror Cell

তদন্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তিতে বড়সড় হামলার পরিকল্পনা করেছিল এই চক্র। আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকেই চুপিসারে রাসায়নিক পদার্থ এনে রাখা হচ্ছিল রুম নম্বর ১৩-তে। ঘরটি ইতিমধ্যেই সিল করে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস, পেন ড্রাইভ, ও রাসায়নিকের নমুনা।

প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছে—রুমটিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ফুয়েল অয়েল এবং ধাতব অক্সাইডের মিশ্রণে বিস্ফোরক তৈরি হচ্ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, লালকেল্লা বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বিস্ফোরক ছিল এই মিশ্রণ থেকেই প্রস্তুত।

Advertisements

তথ্যসূত্রের দাবি, উমর ও শাহিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব থেকে রাসায়নিক স্থানান্তর করতেন ফারিদাবাদের ধাউজ ও টাগা গ্রামের গোপন ঘাঁটিতে—যেখানে চূড়ান্তভাবে বিস্ফোরক জোড়া লাগানো হত।

অভিযোগ অস্বীকার আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে কখনও অনুমোদনবিহীন কোনও রাসায়নিক সংরক্ষণ করা হয়নি। এই ঘটনার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কোনও যোগ নেই।’’

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—দেশের রাজধানীতে এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসের ছক রচনার পেছনে যদি শিক্ষিত চিকিৎসকদের হাত থাকে, তবে সেটি নিঃসন্দেহে এক অন্ধকার ও উদ্বেগজনক অধ্যায়। আল-ফালাহের রুম নম্বর ১৩ আজ শুধু একটি ঘর নয়, ভারতের নিরাপত্তা ইতিহাসে তা এক সতর্কবার্তা—যেখানে শিক্ষার আবরণে লুকিয়ে ছিল মৃত্যু ও ধ্বংসের নকশা।