নয়াদিল্লি: লালকেল্লা বিস্ফোরণ তদন্ত আরও জটিল মোড় নিল। বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ডঃ উমর উন নবি এবং জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-ঘনিষ্ঠ ‘হোয়াইট-কলার’ ফরিদাবাদ টেরর মডিউলের কয়েকজন সদস্য যে ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন, সেই সূত্র ধরেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনে গুরুতর অসংগতি খুঁজে পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, এই আর্থিক অনিয়মেরই কিছু অংশ বিস্ফোরণ-সংশ্লিষ্ট কারবারে ব্যবহৃত হতে পারে।
দিল্লি–এনসিআর জুড়ে ২৫টিরও বেশি স্থানে ইডির তল্লাশি
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দিল্লি এনসিআর জুড়ে আল-ফালাহ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ২৫টিরও বেশি জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। মানি লন্ডারিং, শেল কোম্পানি ব্যবহার, পরোক্ষ অর্থপ্রবাহ, এবং সন্দেহজনক আর্থিক কাঠামো—সবই বর্তমানে তদন্তের আওতায়।
তদন্তকারী এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, “আল-ফালাহ ট্রাস্ট এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির আর্থিক কারবার খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থ ও প্রশাসন সামলানো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও তদন্তের পরিধিতে আনা হয়েছে।”
এক ঠিকানায় ৯ শেল কোম্পানি—ইডির হাতে একাধিক অসঙ্গতি Al-Falah University ED Probe
তল্লাশিতে উঠে এসেছে ৯টি শেল কোম্পানির অস্তিত্ব, যেগুলি সকলই নথিভুক্ত রয়েছে একই ঠিকানায়—এ ধরনের কাঠামো সাধারণত মানি রাউটিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। ইডির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ সূচক—
- নিবন্ধিত ঠিকানায় কোনও কার্যকর অফিস বা কর্মীর উপস্থিতি নেই
- বিভিন্ন কোম্পানিতে একই মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ব্যবহার
- ঘোষণা অনুযায়ী EPFO/ESIC নথিভুক্তির প্রমাণ অনুপস্থিত
- একাধিক প্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তি পরিচালক/স্বাক্ষরকারী হিসেবে যুক্ত
- ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অত্যন্ত কম পরিমাণ বেতন লেনদেন
কোনও সুসংগঠিত HR রেকর্ড নেই
- একই সময় ও একই যোগাযোগের মাধ্যমে কোম্পানিগুলির গঠন
- ইডির মতে, এগুলি সবই শেল কোম্পানি অপারেশনের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য।
- UGC–NAAC স্বীকৃতি নিয়েও প্রশ্ন: ভুয়ো দাবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়কে শো-কজ
আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ তুলেছে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (NAAC)। সংস্থাটি বলছে—বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে যে তারা এবং তাদের তিনটি কলেজ NAAC-এর ‘A’ গ্রেডধারী। অথচ প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বীকৃত নয় এবং NAAC-এর কাছে আবেদনও করেনি।
শো-কজ নোটিসে NAAC স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, “এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা। অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষদের উদ্দেশে ছড়ানো এই তথ্য বিভ্রান্তিকর।” সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে ওয়েবসাইট ও প্রচারসামগ্রী থেকে ওই দাবি সরিয়ে ফেলতে।
বিস্ফোরণের পটভূমি: ১৩ মৃত্যুর পর বাড়ছে সন্দেহের ঘনঘটা
গত ১০ নভেম্বর লালকেল্লার কাছে একটি গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। কয়েক ঘণ্টা আগে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভেঙে দেয় একটি জটিল ‘হোয়াইট-কলার’ জঙ্গি নেটওয়ার্ক। গ্রেফতার হন তিনজন চিকিৎসক, যাঁরা সকলেই আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত।
রেড ফোর্ট বিস্ফোরণ, আর্থিক অনিয়ম, শেল কোম্পানি, ভুয়ো স্বীকৃতি—সব মিলিয়ে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে তদন্ত এখন গভীর, বিস্তৃত এবং বহুস্তরীয়। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার মতে, এই তদন্ত যত এগোবে, ততই সামনে আসতে পারে আরও বড় আর্থিক জাল ও অপ্রকাশিত যোগসূত্র।
