পাটনা: বিহারের রাজনীতিতে ফের সরগরম পরিস্থিতি। সমাজবাদী পার্টি (SP) সভাপতি অখিলেশ যাদব শনিবার স্পষ্ট জানালেন, আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সরকার গড়বেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (RJD) যুব নেতা তেজস্বী যাদব। শনিবার পাটনা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অখিলেশ বলেন, “আমি এখন ক্ষমতায় নেই, কিন্তু তেজস্বীর পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে তাঁকে সাহায্য করব। রাজ্যের মানুষ পরিবর্তন চাইছে, আর সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে তেজস্বী।”
এইদিন অখিলেশ যাদব প্রথমে সারণে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’-য় অংশ নেন। পরে আরার মঞ্চে রাহুল গান্ধী ও তেজস্বী যাদবের সঙ্গে সভা করেন এবং রাজদ প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের পাটনা বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তেজস্বী যাদবকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “তেজস্বীকে আমি রাজ্যের ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখছি। যুবসমাজকে চাকরি দেওয়ার তাঁর প্রতিশ্রুতি বিহারের বাধ্যতামূলক অভিবাসন সমস্যার সমাধান করবে। বিজেপি এবার রাজ্য থেকে বিদায় নেবে।”
অখিলেশ যাদব নির্বাচনী কমিশনের বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (SIR) নির্দেশকে কটাক্ষ করে বলেন, “রাহুল গান্ধীর যাত্রা নির্বাচন কমিশনের নিজেরই SIR করে দিয়েছে। কমিশন এতদিন বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছিল, কিন্তু এবারও তাদের পরাজয় অনিবার্য।” বিজেপি নেতাদের ‘অনুপ্রবেশকারী রক্ষার’ অভিযোগের জবাবে তিনি পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই একজন প্রবাসী। যোগী আদিত্যনাথ উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছেন, পরে গোরখপুরে এসে আশ্রয় নেন।”
তেজস্বী যাদব পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “নির্বাচনী তালিকায় একটিও অনুপ্রবেশকারীর নাম নেই। বরং গুজরাটের বিজেপি নেতা ভিখুভাই দালসানিয়ার নাম তালিকায় রয়েছে।”
সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে অখিলেশ বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত উচ্চ শুল্ক নিয়ে কেন্দ্রের সরকার নীরব। বিজেপির মুখেও শুল্ক চাপানো হয়েছে যেন। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি, বাস্তবে কৃষকরা দিশেহারা।” তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্পূর্ণ বন্ধেরও দাবি জানান এবং ১৯৬২ সালের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
আরার সভায় তিনি আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ৪০,০০০ বছরের ‘ডিএনএ’ মন্তব্যকে কটাক্ষ করে বলেন, “আমরা এতদিন বলছিলাম সামাজিক ন্যায়ের লড়াই ৫,০০০ বছরের। এখন তারা বলছে, তা ৪০,০০০ বছরের। এবার আমাদের লড়াই আরও কঠিন হবে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে অওধ থেকে বিজেপিকে হারানো হয়েছে। এবার মগধ থেকে তাদের সরানোর পালা।”
১৯৯০ সালে সমস্তীপুরে লালকৃষ্ণ আদবানীর রথ আটকানোর ঘটনাও উল্লেখ করেন অখিলেশ। লালু প্রসাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, “তেজস্বী লালুর যোগ্য উত্তরসূরি। বিহারের উন্নয়ন তাঁর হাতেই সম্ভব।”
বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি মানুষকে ব্যবহার করে পরে ধ্বংস করে দেয়। এবার মানুষই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। তেজস্বী মুখ্যমন্ত্রী হলে বিহার থেকে বিজেপিই অভিবাসিত হবে।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, সমাজবাদী পার্টি, কংগ্রেস এবং আরজেডির একত্রিত বার্তা বিহারে বিজেপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগামী নির্বাচনে তেজস্বী যাদবের যুবকেন্দ্রিক প্রচার এবং অখিলেশের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব বিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।