বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ (ajay-banga) জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস জল চুক্তিতে বিশ্বব্যাঙ্কের ভূমিকা শুধুমাত্র একটি সুবিধাদাতার। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারত কর্তৃক চুক্তিটি স্থগিত করার বিষয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। ১৯৬০ সালে নয় বছরের আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে বিশ্বব্যাঙ্কও একটি স্বাক্ষরকারী পক্ষ হিসেবে ছিল।
অজয় বঙ্গ বলেছেন (ajay-banga)
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর উদ্ধৃতি অনুযায়ী অজয় বঙ্গ (ajay-banga) বলেছেন, “আমাদের কোনো ভূমিকা নেই, শুধুমাত্র সুবিধাদাতা হিসেবে ছাড়া। গণমাধ্যমে অনেক জল্পনা চলছে যে বিশ্বব্যাঙ্ক এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করবে, কিন্তু এসব ভিত্তিহীন। বিশ্বব্যাঙ্কের ভূমিকা কেবলমাত্র একটি সুবিধাদাতার।”
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজয় বঙ্গ (ajay-banga) জাতীয় রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই জল্পনা শুরু হয় যে বিশ্বব্যাঙ্ক এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে, বঙ্গের (ajay-banga) বক্তব্য এই জল্পনাকে নাকচ করে দিয়েছে। একই দিনে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তান বারবার ইন্দাস জল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে “আইনি বাধা” সৃষ্টি করেছে।
তিনি (ajay-banga) উল্লেখ করেন, গত ৬৫ বছর ধরে ভারত এই চুক্তি মেনে চলেছে, এমনকি যখন পাকিস্তান ভারতের উপর একাধিক যুদ্ধ চাপিয়েছে। মিশ্রি বলেন, “গত আড়াই বছর ধরে ভারত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা তাদের কাছে চুক্তি সংশোধনের জন্য আলোচনার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক নোটিশ পাঠিয়েছি।
ভারত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চুক্তি সম্মান করে এসেছে, এমনকি পাকিস্তানের একাধিক উসকানির সময়েও। পাকিস্তানই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোতে বৈধ অধিকার প্রয়োগে আইনি বাধা সৃষ্টি করে। ভারতের ধৈর্যের কারণেই আমরা ৬৫ বছর ধরে এই চুক্তি মেনে চলেছি।”
মিশ্রি আরও জানান, পাকিস্তান ভারতের আলোচনার অনুরোধে “বারবার প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকার” করেছে, যা চুক্তি স্থগিত করার আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্দাস জল চুক্তির বিবরণ
ইন্দাস জল চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলো (ইন্দাস, ঝেলাম, চেনাব) পাকিস্তানের জন্য এবং পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো (রাভি, বিয়াস, সতলুজ) ভারতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে, চুক্তি উভয় দেশকে একে অপরের জন্য বরাদ্দকৃত নদীগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণ জল ব্যবহারের অনুমতি দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, ইন্দাস নদী ব্যবস্থার ২০ শতাংশ জল ভারত পায়, এবং বাকি ৮০ শতাংশ পাকিস্তানের জন্য।
সাইবার হামলার আশঙ্কা! RBI ও NPCI-কে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা
পহেলগাঁও হামলা ও চুক্তি স্থগিত
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা’র একটি প্রক্সি গ্রুপ কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে দায়ী করেছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের দাবি, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে চলেছে, যা চুক্তির মূলনীতির লঙ্ঘন।
বিদেশ সচিব মিশ্রি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এবং চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন ভারতকে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের অব্যাহত অসহযোগিতা এবং আইনি বাধা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চুক্তির কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।”
বিশ্বব্যাঙ্কের অবস্থান
অজয় বঙ্গের (ajay-banga) বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বিশ্বব্যাঙ্ক এই দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে কোনো মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে না। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাঙ্কের দায়িত্ব শুধুমাত্র চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সুবিধা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, বিশেষ করে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার জল সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাকিস্তানের অর্থনীতি ও কৃষি ইন্দাস নদী ব্যবস্থার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, এবং চুক্তির স্থগিতাদেশ দেশটির জন্য উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, ভারত বারবার জানিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদ এবং জল সম্পদের ন্যায্য ব্যবহার নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পূর্বে বলেছেন, “রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না।” এই বক্তব্য ভারতের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে।
ভারতের পদক্ষেপ
ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করার পাশাপাশি, ভারত পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোতে তার বৈধ অধিকার প্রয়োগের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন। পাকিস্তান এই প্রকল্পগুলোর বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ভারতের অভিযোগ অনুযায়ী চুক্তির মূল উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।
ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করার ভারতের সিদ্ধান্ত এবং বিশ্বব্যাঙ্কের (ajay-banga) নিরপেক্ষ অবস্থান ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এবং চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ভারতের এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের অসহযোগিতা এবং আইনি বাধা সৃষ্টির প্রচেষ্টা দুই দেশের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।