জঙ্গি গড়ার কারখানা আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যপদ খারিজ করল অ্যাসোসিয়েশন

Al-Falah University

অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটিজ অ্যাসোসিয়েশন (Association of Indian Universities বা AIU) আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয় (Al-Falah University), ফরিদাবাদের সদস্যপদ তৎক্ষণাৎ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩ নভেম্বর ২০২৫ তারিখের একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। AIU–র সেক্রেটারি জেনারেল ড. পঙ্কজ মিত্তাল স্বাক্ষরিত চিঠিটি আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর (ড.) ভূপিন্দর কৌর আনন্দ–এর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং দেশের সকল সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটের কর্তাদের কাছেও কপি পাঠানো হয়েছে।

Advertisements

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, AIU-এর উপ-আইন অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন “গুড স্ট্যান্ডিং” বজায় রাখে, ততদিনই তার সদস্যপদ বহাল থাকে। তবে বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট, পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে যে Al-Falah University, Faridabad বর্তমানে ‘গুড স্ট্যান্ডিং’-এর মানদণ্ডে নেই। এই কারণেই তাদের সদস্যপদ তৎক্ষণাৎ স্থগিত করা হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।

   

AIU জানিয়েছে, সদস্যপদ স্থগিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টি আর কোনোভাবেই AIU–র নাম বা লোগো ব্যবহার করতে পারবে না। AIU স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে অবিলম্বে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ব্রোশিওর, বিজ্ঞাপন, সেমিনার পোস্টার বা কোনো সরকারি নথি থেকে AIU লোগো সরিয়ে ফেলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় AIU–র পরিচয় বা লোগোর ব্যবহার চালিয়ে গেলে সেটি নিয়মভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে কতটা প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, যদিও AIU সদস্যপদ সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা, একাডেমিক স্বীকৃতি এবং শিক্ষাগত বিনিময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও AIU সদস্যপদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করে। সেই বিবেচনায়, এই সিদ্ধান্ত আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলেই পর্যবেক্ষকদের মত।

AIU–র চিঠিতে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ বা কারণ উল্লেখ করা হয়নি যে বিশ্ববিদ্যালয় কোন কোন কারণে ‘গুড স্ট্যান্ডিং’-এর বাইরে চলে গেছে। চিঠিতে কেবল বলা হয়েছে “as per media reports” এবং “does not appear to be in good standing”—অর্থাৎ চূড়ান্ত বা প্রমাণিত অবস্থানের চেয়ে একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ বা মূল্যায়ন হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে যে AIU এখনও তদন্ত বা পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাখ্যা বা নথিও চাইতে পারে।

আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক মহল পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং AIU–র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। কিছু অ্যাকাডেমিক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, AIU–র এই সিদ্ধান্ত সাময়িক হতে পারে—যদি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের ব্যাখ্যা বা সংশোধনমূলক রিপোর্ট জমা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারে।

Advertisements

উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে কেন্দ্র করে স্বীকৃতি, ফ্যাকাল্টির যোগ্যতা, পরিকাঠামো, ফান্ডিং এবং প্রশাসনিক অসঙ্গতি নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। AIU–র এই সিদ্ধান্ত সেই বৃহত্তর পর্যালোচনা প্রক্রিয়ারই অংশ হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে “কমপ্লায়েন্স” এবং “স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন্যান্স”–এ আরও কঠোরতা আনতেই এ ধরনের পদক্ষেপ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে—বিশেষত তারা ভাবছেন, AIU সদস্যপদ স্থগিত হলে উচ্চশিক্ষা, বৃত্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে কি না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, AIU সদস্যপদ সরাসরি ডিগ্রি বৈধতাকে প্রভাবিত করে না। বিশ্ববিদ্যালয় যদি UGC–র স্বীকৃত হয়, তবে ডিগ্রি কার্যকর থাকে। AIU সদস্যপদ মূলত শিক্ষাগত প্রশাসন, সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, স্পোর্টস এবং একাডেমিক সমন্বয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ফলে ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই।

তবে AIU–র এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং পরিচালন ব্যবস্থায় প্রশ্ন তুলছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিশ্ববিদ্যালয় যদি দ্রুত পরিস্থিতি স্বচ্ছ না করতে পারে বা AIU–কে সন্তুষ্ট করতে না পারে, তাহলে আগামী দিনে আরও বড় প্রশাসনিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

চিঠির শেষাংশে AIU জানিয়েছে, এই নোটিশ তথ্য হিসেবে গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যপদ পুনর্বহাল হবে কি না, তা নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয় “গুড স্ট্যান্ডিং”-এর মানদণ্ডে পুনরায় উত্তীর্ণ হতে পারে কি না তার ওপর।

এই সিদ্ধান্ত উচ্চশিক্ষা মহলে আলোড়ন তুলেছে। এখন নজর থাকবে আল-ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয় এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং AIU পরবর্তী মূল্যায়নে কী মন্তব্য করে।