অমৃতসর-দিল্লি বিমানে উত্তেজনা! অভিযুক্ত যাত্রীকে নিরাপত্তার হাতে দিল এয়ার ইন্ডিয়া

অমৃতসর থেকে দিল্লি অভিমুখে যাত্রারত এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India)একটি ফ্লাইটে জুন ২৮ তারিখে ঘটে যাওয়া এক অস্বাভাবিক ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদের…

Air India Hands Over Unruly Passenger to Security After Amritsar-Delhi Flight Dispute

অমৃতসর থেকে দিল্লি অভিমুখে যাত্রারত এয়ার ইন্ডিয়ার (Air India)একটি ফ্লাইটে জুন ২৮ তারিখে ঘটে যাওয়া এক অস্বাভাবিক ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদের জেরে বিমান অবতরণের আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছিল কেবিন ক্রু এবং পরবর্তী সময়ে বিমানবন্দর নিরাপত্তা কর্মীদের।

বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ফ্লাইট নম্বর AI 454 যখন অবতরণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেই সময় এক যাত্রী অপর এক যাত্রীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়ে। “অবতরণের সময় কেবিন প্রস্তুতির সময়, আমাদের একজন কেবিন ক্রু লক্ষ্য করেন যে এক যাত্রী আইলের মধ্যে দাঁড়িয়ে অন্য যাত্রীর সঙ্গে বচসায় লিপ্ত। দ্বিতীয় যাত্রী ক্রুকে জানান যে প্রথম ব্যক্তি তার প্রতি অভদ্র আচরণ করছেন,” এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যম মানিকন্ট্রোলের প্রতিবেদনে।

   

এই অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয় কেবিন ক্রু। পরিস্থিতি যাতে আরও না বাড়ে, সে জন্য অভদ্রতার অভিযোগকারী যাত্রীকে সাময়িকভাবে বিজনেস ক্লাসে স্থানান্তর করা হয়। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “অবতরণের সময় যাত্রীদের সুরক্ষা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের কেবিন ক্রু তাৎক্ষণিকভাবে দ্বিতীয় যাত্রীকে বিজনেস ক্লাস সিটে বসিয়ে দেন।”

দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণের পর অভিযুক্ত যাত্রী গ্রেপ্তার
দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই অভিযুক্ত যাত্রীকে বিমানবন্দর সিকিউরিটি স্টাফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পাইলট-ইন-কমান্ড আগে থেকেই নিরাপত্তা দলকে পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করেছিলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দ্বিতীয় যাত্রী যে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তার ভিত্তিতে পাইলট-ইন-কমান্ড দিল্লি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা টিমকে আগে থেকে জানিয়ে রাখেন। বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এবং অভিযুক্ত যাত্রীকে হেফাজতে নেন।”

‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে দৃঢ় এয়ার ইন্ডিয়া
এয়ার ইন্ডিয়া আবারও স্পষ্ট জানিয়েছে যে, তারা বিমানে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যাত্রী এবং কেবিন ক্রুদের নিরাপত্তা এবং মঙ্গল আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যে কোনো ধরনের অবাঞ্ছিত, অসভ্য ও বিশৃঙ্খল আচরণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।” সংস্থার মুখপাত্র আরও জানান, “আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব এবং বর্তমানে বিষয়টি তাদের বিচারাধীন।”

DGCA’র কঠোর নির্দেশিকা
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, এই ধরনের যাত্রীদের বিরুদ্ধে বিমান সংস্থাগুলোকে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়। নিয়ম অনুসারে, এ ধরনের ঘটনার তদন্তের জন্য প্রতিটি বিমান সংস্থাকে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করতে হয়। কমিটি ঘটনার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিচার করে, প্রয়োজনে অভিযুক্ত যাত্রীকে ‘নো-ফ্লাই লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করতে পারে।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিমানে যাত্রী বিশৃঙ্খলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। বিভিন্ন কারণে যাত্রীরা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন বা নিয়ম ভাঙেন, যা অন্য যাত্রী এবং কর্মীদের জন্য বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। এ কারণে DGCA এবং বিমান সংস্থাগুলি বারবার সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে।

যাত্রীদের সচেতনতা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলার বিষয়টি আরও জোর দিয়ে প্রচার করা উচিত। বিমানযাত্রার সময় কিছু মৌলিক নিয়ম মেনে চলা সকলেরই দায়িত্ব। বিমানের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা, অপ্রয়োজনীয়ভাবে উচ্চস্বরে কথা বলা বা অন্য যাত্রীর সঙ্গে তর্কে জড়ানো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, পুরো ফ্লাইটের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ফ্লাইট AI 454-এর ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল, এয়ার ইন্ডিয়া তার যাত্রী এবং কর্মীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের আপস করে না। দ্রুত এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কেবিন ক্রুদের পদক্ষেপ এবং অভিযুক্ত যাত্রীকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া, উভয়ই বিমান সংস্থার কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতিফলন।

এই ঘটনার পর, আশা করা যায় অন্যান্য যাত্রীরাও সচেতন হবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে সহযোগিতা করবেন। এয়ার ইন্ডিয়ার এই দৃঢ় পদক্ষেপ অন্যান্য বিমান সংস্থার জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।