হায়দরাবাদ থেকে থাইল্যান্ডের ফুকেটের উদ্দেশে যাত্রা করা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের (Air India)একটি ফ্লাইট (আইএক্স ১১০) শনিবার সকালে মাঝ আকাশে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে এসেছে। ফ্লাইটটি, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। ফ্লাইটটিতে মোট ৯৮ জন যাত্রী ছিলেন, সকাল ৬:৪০ মিনিটে হায়দরাবাদ থেকে উড্ডয়ন করে।
কিন্তু মাত্র ১৬ মিনিট আকাশে থাকার পর, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে পাইলট সতর্কতার সঙ্গে বিমানটিকে হায়দরাবাদে ফিরিয়ে আনেন। ফ্লাইটটি সকাল ৬:৫৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করে। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমাদের একটি ফ্লাইট ওড়ার কিছুক্ষণ পর প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ক্রু সদস্যরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে হায়দরাবাদে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।”
এই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেক যাত্রী সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার যোগাযোগের অভাবের জন্য অভিযোগ করেছেন। একজন যাত্রী লিখেছেন, ফ্লাইট আইএক্স ১১০ হায়দরাবাদ থেকে ফুকেটের উদ্দেশে উড্ডয়নের পর ফিরে এসেছে। আমরা এখনও বিমানের ভিতরে অপেক্ষা করছি, কোনও আপডেট নেই। খুবই হতাশাজনক।”
আরেকজন যাত্রী লিখেছেন, “এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে আর কখনও উড়ব না। অগোছালো পুনঃনিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।” এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সামাজিক মাধ্যমে এই অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে জানিয়েছে, “আপনার ফ্লাইটের ব্যাঘাতের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। প্রযুক্তিগত কারণে বিলম্ব হয়েছে, কারণ আমাদের অতিথিদের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।”
এয়ারলাইনটি দ্রুত বিকল্প বিমানের ব্যবস্থা করে এবং যাত্রীদের জন্য অপেক্ষার সময়ে রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা করে। ফ্লাইটটি অবশেষে দুপুর ১:২৬ মিনিটে ফুকেটের উদ্দেশে পুনরায় উড্ডয়ন করে। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের মুখপাত্র আরও বলেছেন, “আমরা অসুবিধার জন্য দুঃখিত এবং পুনরায় নিশ্চিত করছি যে আমাদের কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার।”
ফ্লাইটটি মূলত সকাল ১১:৪৫ মিনিটে ফুকেটে অবতরণের কথা ছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই বিলম্ব ঘটে। তবে, প্রযুক্তিগত ত্রুটির সঠিক প্রকৃতি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে কৃষি খাতে সাফল্যের নজির গড়ল ভারত
এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং অন্যান্য এয়ারলাইনগুলির একাধিক প্রযুক্তিগত সমস্যার ঘটনার মধ্যে একটি। এর আগে, ১৬ জুলাই এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের জয়পুর থেকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইট প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে বাতিল হয়েছিল। একই দিনে, ইন্ডিগোর দিল্লি থেকে গোয়াগামী একটি ফ্লাইট মাঝ আকাশে ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় মুম্বাইয়ে জরুরি অবতরণ করেছিল। এই ঘটনাগুলি বিমান রক্ষণাবেক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনাগুলি এয়ারলাইনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তিগত পরীক্ষার উপর আরও কঠোর তদারকির প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তর (ডিজিসিএ) এই ঘটনার তদন্ত করতে পারে।
এদিকে, হায়দরাবাদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ফ্লাইটটির নিরাপদ অবতরণে কোনও যাত্রী বা ক্রু সদস্য আহত হননি এবং বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনও প্রভাব পড়েনি।
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস সম্প্রতি হায়দরাবাদ থেকে ফুকেটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে, যা ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে শুরু হয়েছে। এই রুটটি ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চালু করা হয়েছিল।
তবে, এই ঘটনা এয়ারলাইনটির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যাত্রীরা এখন এয়ারলাইন এবং বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও স্বচ্ছতা এবং দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন। এই ঘটনা ভবিষ্যতে এয়ারলাইনগুলির জন্য রক্ষণাবেক্ষণ ও যাত্রী যোগাযোগে আরও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।