ড্রোন প্রযুক্তি ভারতে এখনো পিছিয়ে দাবি বিমান বাহিনীর প্রধানের

ভারতীয় বিমান বাহিনীর (Air Force) ডেপুটি চিফ অফ এয়ার স্টাফ এয়ার মার্শাল অশুতোষ দীক্ষিত সম্প্রতি ড্রোন প্রযুক্তি এবং এর ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য…

Air Force chief about drone technology

ভারতীয় বিমান বাহিনীর (Air Force) ডেপুটি চিফ অফ এয়ার স্টাফ এয়ার মার্শাল অশুতোষ দীক্ষিত সম্প্রতি ড্রোন প্রযুক্তি এবং এর ক্রমবর্ধমান কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ড্রোন প্রযুক্তি অনেক দিন ধরেই ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের পর এটি হঠাৎই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এখন এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, এবং আমরা এই বিষয়ে আরও গভীরভাবে গবেষণা করছি। মানববিহীন আকাশযান (ইউএভি) বা ড্রোনের কৌশলগত গুরুত্ব এখন ভারতের প্রতিটি শিশুর কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে।” তিনি মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন এবং রাশিয়ায় ড্রোনের ব্যবহার উল্লেখ করে বলেন, এই প্রযুক্তি যুদ্ধের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

   

তবে, তিনি এও উল্লেখ করেন যে ড্রোনের অনেক উপাদান এখনও বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে, এবং এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষ, শিল্প, বৈজ্ঞানিক সংস্থা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে।এয়ার মার্শাল দীক্ষিত একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, “অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য ড্রোন প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে সামনে এনেছে। এই প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ড্রোনের ব্যবহার আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এটি শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বেসামরিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।” তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, ড্রোনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে তাদের চাহিদা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। শিল্পকে উদ্ভাবনের উপর জোর দিতে হবে, এবং বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলিকে স্বদেশী সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে হবে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে মৌলিক গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে।”অপারেশন সিঁদুর , যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গোপন অভিযান, ড্রোন প্রযুক্তির কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।

এই অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এই সাফল্য ড্রোন প্রযুক্তির কৌশলগত গুরুত্বকে সামনে এনেছে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এই ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

দীক্ষিত বলেন, “ড্রোন যুদ্ধের একটি নতুন ডোমেইন তৈরি করেছে। এটি কেবল শত্রুর উপর নজরদারি বা আক্রমণের জন্য নয়, সীমান্ত নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং বেসামরিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার এই প্রযুক্তির গুরুত্বকে বিশ্বব্যাপী প্রমাণ করেছে। ইউক্রেনে কম খরচে নির্মিত ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার উন্নত সামরিক সরঞ্জামের বিরুদ্ধে সাফল্য অর্জন করা হয়েছে। এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতকে স্বদেশী ড্রোন প্রযুক্তি উন্নয়নে জোর দিতে হবে বলে মনে করেন দীক্ষিত।

Advertisements

তিনি বলেন, “আমাদের শিল্পকে উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ডিআরডিও, এইচএএল এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলিকে স্বদেশী ড্রোন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।”দীক্ষিত আরও জানান, ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইতিমধ্যে ড্রোন প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়েছে।

লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার সময় ড্রোন ব্যবহার করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নজরদারি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমাদের ড্রোনের উপাদান এখনও বিদেশ থেকে আসছে। এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে।”

তিনি সরকার, শিল্প এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছেন।সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ড্রোন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। ডিআরডিও এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি যৌথভাবে স্বদেশী ড্রোন তৈরির কাজ শুরু করেছে। স্টার্টআপগুলিও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তবে, দীক্ষিত মনে করেন, এই প্রচেষ্টাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের চাহিদা একত্রিত করে শিল্পকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলির গবেষণা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করবে।”সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ড্রোন প্রযুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব আনবে।

আমাদের স্বদেশী উৎপাদন বাড়াতে হবে।” আরেকজন লিখেছেন, “অপারেশন সিঁদুর আমাদের ড্রোনের শক্তি দেখিয়েছে। এখন সরকারের উচিত শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে হাত মেলানো।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়ন ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ফের শিরোনামে সলমন খান, এবার বান্দ্রার ফ্ল্যাট বিক্রি 

এয়ার মার্শাল দীক্ষিতের মন্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাচ্ছে। আগামী দিনে ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নে ভারত কতটা অগ্রগতি অর্জন করতে পারে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।