এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: ‘চূড়ান্ত রিপোর্ট ছাড়া সিদ্ধান্ত নয়’, বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

নয়াদিল্লি: গত ১২ জুন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়েছিল আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান। ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি সোজা…

AI171 Crash Minister Statement

নয়াদিল্লি: গত ১২ জুন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়েছিল আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমান। ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে আহমেদাবাদের বিখ্যাত BJ মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল ভবনে। ঘটনায় প্রাণ হারান বিমানে থাকা ২৪১ জন যাত্রী ও কর্মী এবং মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন মোট মৃতের সংখ্যা ২৬০।

শনিবার এই দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে যা রিপোর্ট এসেছে, তা কেবল প্রাথমিক। চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয়।” মন্ত্রী জানান, “এই তদন্ত অত্যন্ত জটিল এবং বেশ কিছু প্রযুক্তিগত বিষয় এতে জড়িত। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক পুরো রিপোর্ট খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করছে। এখনও চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি।”

   

প্রাথমিক তদন্তে কী উঠে এল?

এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (AAIB) দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওড়ার তিন সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের দু’টি ইঞ্জিনেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’-এ চলে যায়। ফলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে পড়ে এবং বিমানটি একেবারে নিচে নেমে আসে। তবে AAIB-এর রিপোর্টে এখনো স্পষ্টভাবে বলা হয়নি-এই সুইচ বদল ভুলবশত হয়েছিল, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে।

ককপিটে পাইলটদের সংক্ষিপ্ত কথোপকথন AI171 Crash Minister Statement

ব্ল্যাক বক্সে সংরক্ষিত ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে ধরা পড়েছে পাইলটদের একটি সংক্ষিপ্ত কথোপকথন। সেখানে একজন পাইলট অপরজনকে প্রশ্ন করেন, “তুমি জ্বালানি সরবরাহ কেন বন্ধ করলে?” উত্তরে অপর পাইলট বলেন, “আমি করিনি।”

এই ফ্লাইটের কম্যান্ডে ছিলেন ৫৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল, যাঁর মোট ১৫,৬৩৮ ঘণ্টা ফ্লাইং অভিজ্ঞতা রয়েছে। সহ-পাইলট ছিলেন ৩২ বছর বয়সী ক্লাইভ কুন্দর, যাঁর ফ্লাইং আওয়ার্স ছিল ৩,৪০৩ ঘণ্টা।

Advertisements

‘এই কথোপকথনই সব প্রমাণ করে না’

এই প্রসঙ্গে অসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মুরলীধর মোহোল বলেন, “এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত টানা উচিত নয়। তদন্ত এখনও চলছে, এবং AAIB কোনও রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ব্ল্যাক বক্স দেশের মধ্যেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে-বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন পড়েনি।”

পাইলট ও ক্রুদের দক্ষতার প্রতি মন্ত্রীর আস্থা

পাইলটদের দক্ষতা নিয়েও মত দেন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু। তাঁর কথায়, “আমাদের পাইলট ও ক্রুদের মান বিশ্বের মধ্যে সেরা। ওরাই আমাদের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড।”

চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় গোটা দেশ

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এখনও স্তব্ধ গোটা দেশ। মৃতদের পরিবার, এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ, ও সাধারণ যাত্রী সমাজের এখন একটাই প্রশ্ন-এই দুর্ঘটনার দায় আসলে কার? উত্তর দেবে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট, যা না আসা পর্যন্ত সরকার কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।