নয়াদিল্লি: আহমদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনার এক মাস পর, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এল নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সুইচ ‘কাটঅফ’ থেকে ‘রান’ করার চেষ্টা
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানের “মে ডে” কল (জরুরি সংকেত) এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের কাছে পৌঁছনোর মাত্র ১৩ সেকেন্ড আগে, পাইলটরা বিমানের জ্বালানির সুইচ ‘কাটঅফ’ (বন্ধ) থেকে ‘রান’ (চালু) অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলেন। অর্থাৎ, বিমানের ইঞ্জিন ফের চালু করতে তখনও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তাঁরা।
এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার-এর দুই ইঞ্জিনই শুরুতে থ্রাস্ট বা শক্তি হারায়। পরে এক মুহূর্তের জন্য সেই শক্তি ফেরে, তবে তা স্থায়ী হয়নি।
দ্বিতীয় ইঞ্জিন কোনও ভাবেই চালু হয়নি AI171 Crash Investigation Update
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, প্রথম ইঞ্জিন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও, দ্বিতীয় ইঞ্জিন আর কোনও ভাবেই পুনরায় চালু করা যায়নি।
তদন্তে এনহান্সড এয়ারবোর্ন ফ্লাইট রেকর্ডার (EAFR)-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ১২ জুন সকাল ৮টা ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে (UTC) ইঞ্জিন-১-এর ফুয়েল সুইচ আবার ‘RUN’ অবস্থায় আনা হয়। কিন্তু তার ১৩ সেকেন্ডের মধ্যেই “মে ডে” সংকেত পাঠাতে বাধ্য হন পাইলটরা।
এই তথ্য থেকে স্পষ্ট, বিমানের দুই চালক শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইঞ্জিন পুনরায় চালু করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
২৬০ জনের মৃত্যু
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। উড়ানে থাকা ২৪২ জন যাত্রী-কর্মী-সহ ২৬০ জনের মৃত্যু হয়, কারণ বিমানটি কিছুক্ষণের মধ্যেই আহমদাবাদের একটি মেডিক্যাল হস্টেল ভবনের ছাদে ভেঙে পড়ে ও তাতে বিস্ফোরণ ঘটে৷ অলৌকিকভাবে একজন যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান।
প্রসঙ্গত, এর আগে তদন্তে জানা গিয়েছিল, বিমান রানওয়ে ছাড়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই জ্বালানির সরবরাহ আচমকা বন্ধ হয়ে যায়, কারণ জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ ‘RUN’ থেকে ‘CUTOFF’-এ চলে গিয়েছিল। ককপিটের অডিয়ো রেকর্ডিংয়ে এক পাইলটকে অপরকে জিজ্ঞেস করতে শোনা গিয়েছিল, “তুমি বন্ধ করে দিলে?” — যার জবাবে উত্তর আসে, “আমি করিনি।”
আলোচনায় বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৮৭ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ
এই ঘটনার পর আবার আলোচনায় এসেছে বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৮৭ বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচে সম্ভাব্য যান্ত্রিক ত্রুটি সংক্রান্ত সেই পুরনো সতর্কবার্তা, যা মার্কিন FAA সাত বছর আগে জারি করেছিল। কিন্তু তদন্ত বলছে, এয়ার ইন্ডিয়া সেই নির্দেশিকা মেনে পর্যবেক্ষণ করেনি।
AAIB জানিয়েছে, চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে এই তথ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে, বিপদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাইলটদের মধ্যে সাহস ও দায়িত্ববোধে কোনও ঘাটতি ছিল না।