মায়ের শরীরেই ঢাল, মায়ের ত্বকেই সুরক্ষা, বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে ফিরল আট মাসের ধ্যানেশ

আমেদাবাদ: ২৮ বছরের মনীষা কচ্ছাড়িয়া সেদিন জানতেন না, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার জীবনে কত বড় ঝড় আসে চলেছে৷ ১২ জুন, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ান দেওয়ার…

Ahmedabad Plane Crash Mother Heroism

আমেদাবাদ: ২৮ বছরের মনীষা কচ্ছাড়িয়া সেদিন জানতেন না, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার জীবনে কত বড় ঝড় আসে চলেছে৷ ১২ জুন, আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ান দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বি.জে. মেডিকেল কলেজের আবাসনের উপর ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার IC171৷  সেই সময় আট মাসের শিশুপুত্র ধ্যানেশ-কে নিয়ে বাড়ির ভেতরেই ছিলেন মনীষা। আগুন আর ধোঁয়ায় ভরে উঠেছিল চারদিক, বাতাসে ছিল পোড়া দেহের গন্ধ, কাঁচ, ইট, কংক্রিটের গুঁড়ো। আর সেই মৃত্যুর ধোঁয়াশা ঘেরা মুহূর্তে, এক মা তার সন্তানকে বাঁচাতে দাঁড়িয়ে গেলেন আগুনের সামনে, বুক পেতে রক্ষা করলেন ছেলেকে (Ahmedabad Plane Crash Mother Heroism)।

“আমরা বুঝতেই পারিনি কী হল। এক সেকেন্ডের জন্য সব অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তারপর যেন আমাদের ঘরের ভিতরেই আগুন ঢুকে পড়ল,”  মনীষার স্মৃতিচারণে এখনও কাঁপছে সেই মুহূর্তের আতঙ্ক।

   

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে মনীষার একটাই চিন্তা, ধ্যানেশকে বাঁচাতে হবে। আগুনের হলকা, গলানো ধাতব কাঠামো, ঘন ধোঁয়ার মধ্যেও সন্তানকে জড়িয়ে ধরে পালাতে শুরু করলেন তিনি। নিজে ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েও মনীষা ছেলের গায়ে একটুও আঁচ লাগতে দেননি।

কিন্তু ধোঁয়া, উত্তাপ, আগুন— সব কিছুর সামনে থেকেও ধ্যান্শ শেষরক্ষা পায়নি। মুখ, বুক, দুই বাহু, পেট মিলিয়ে তার শরীরের ৩৬ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাকে তড়িঘড়ি ভর্তি করা হয় KD হসপিটালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। শ্বাস নিতে না পারার জন্য রাখা হয় ভেন্টিলেশনে।

তবু এখানেই শেষ নয়। ছেলের পোড়া শরীর সারাতে যখন স্কিন গ্রাফটিং-এর প্রয়োজন পড়ে, তখন আবার মা-ই এগিয়ে এলেন। নিজের শরীর থেকে ত্বক দান করলেন ধ্যানেশের জন্য। চিকিৎসকদের ভাষায়, ‘তিনি শুধু মায়ের মতো আগুনে আগলে রাখেননি, রক্ত-মাংসেও ছেলেকে ঢেকে দিয়েছেন।’

হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডঃ আদিত দেশাই বলেন, “এমন মায়ের সাহস, ভালোবাসা, আর আত্মত্যাগ এক কথায় হৃদয়বিদারক। প্রতিটি বিভাগ একযোগে কাজ করেছে, তবে যোদ্ধা মনীষা ছিলেন এই লড়াইয়ের প্রাণভোমরা।”

চিকিৎসকদলের সদস্য ডঃ রুত্বিজ পারিখ জানান, “শিশুটির বয়স চিকিৎসাকে আরও জটিল করে তুলেছিল। কিন্তু মায়ের ত্বক দিয়ে গ্রাফট করা সম্ভব হওয়ায় সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমেছিল।”

Advertisements

এই গল্পের আরেক নায়ক ধ্যানেশের বাবা, ডঃ কপিল কচ্ছাড়িয়া। বি.জে. মেডিকেল কলেজের ইউরোলজির সুপার স্পেশালিটি ছাত্র কপিল ঘটনার সময় হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন। পরে ছেলের চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে, এমনকি মাঝরাতে ড্রেসিং পরিবর্তনের কাজেও নিজ হাতে সহযোগিতা করেন।

পাঁচ সপ্তাহের ইনটেনসিভ কেয়ারের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন মা ও ছেলে। পুড়ে যাওয়া শরীরের যন্ত্রণা থেকে তাঁরা আজ মুক্ত, তবে এই ঘটনার ক্ষত থেকে যাওয়ার মতোই।

এক মাতৃত্ব, এক অঙ্গীকার, এক জীবন-নিয়ে-লড়ে-ফেরা ভালোবাসা— মনীষার কাহিনি যেন আগুনের ভিতর থেকেও জ্বলন্ত হয়ে রয়ে যায় মনে।

এই পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততদিন থাকবে এমন কিছু মায়েদের কথা— যাঁরা নিজের শরীর দিয়ে সন্তানকে ঢেকে দেন মৃত্যুর হাত থেকে।