এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনার (ahmedabad) দুদিন পর, আজ কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব সমীর কুমার সিনহা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর আহমেদাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, “দুপুর ১:৩৯ মিনিটে পাইলট আহমেদাবাদ (ahmedabad) এটিসি-কে জানান যে এটি একটি ‘মেডে’ বা পূর্ণ জরুরি অবস্থা। এটিসি যখন বিমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে, তখন কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ঠিক এক মিনিট পর, বিমানটি মেঘানিনগরে বিধ্বস্ত হয়, যা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন সুমিত সবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ছিলেন ক্লাইভ সুন্দর।”
দুর্ঘটনার বিবরণ
সিনহা আরও জানান, বিমানটি ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর উচ্চতা হারাতে শুরু করে(ahmedabad)। তিনি বলেন, “এআইসি ১৭১ বিমানটিতে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট এবং ১০ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। দুপুর ১:৩৯ মিনিটে উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পর, ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বিমানটি উচ্চতা হারাতে শুরু করে এবং বিধ্বস্ত হয়।”
তিনি আরও জানান, এই বিমানটির কোনও দুর্ঘটনার ইতিহাস ছিল না এবং এটি প্যারিস-দিল্লি-আহমেদাবাদ সেক্টরে পূর্বে কোনও দুর্ঘটনা ছাড়াই উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছিল। দুর্ঘটনার পর আহমেদাবাদ (ahmedabad) বিমানবন্দরের রানওয়ে বিকেল ২:৩০ মিনিটে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমস্ত প্রোটোকল মেনে বিকেল ৫টা থেকে সীমিত ফ্লাইটের জন্য রানওয়ে পুনরায় চালু করা হয়।
তদন্তের অগ্রগতি (ahmedabad)
কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাম মোহন নায়ডু জানিয়েছেন, বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার তদন্ত প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি), যা বিশেষভাবে বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত, তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। গতকাল বিকেল ৫টায় ধ্বংসস্তূপ থেকে ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে।
এএআইবি দল মনে করে, ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ দুর্ঘটনার সময় বা তার ঠিক আগে কী ঘটেছিল, তা সম্পর্কে গভীর তথ্য প্রদান করবে। আমরা এএআইবি-র পূর্ণ তদন্তের ফলাফলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।”
নায়ডু আরও জানান, এই দুর্ঘটনা গোটা দেশকে বিচলিত করেছে। তিনি বলেন, “গত দুই দিন আমাদের, বিশেষ করে মন্ত্রণালয় এবং সকলের জন্য খুবই কঠিন ছিল। আহমেদাবাদে (ahmedabad) ঘটে যাওয়া এই ঘটনা গোটা জাতিকে হতবাক করেছে। যারা এই দুর্ঘটনায় তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আমি নিজেও একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আমার বাবাকে হারিয়েছি, তাই আমি কিছুটা হলেও পরিবারের সদস্যদের বেদনা ও যন্ত্রণা বুঝতে পারি।”
দুর্ঘটনার বিবরণ ও প্রভাব
বৃহস্পতিবার, লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১, যা বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, আহমেদাবাদের (ahmedabad) সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পর বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি মেঘানিনগরে বিজে মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের আবাসিক কোয়ার্টারে আছড়ে পড়ে এবং আগুনের গোলায় পরিণত হয়। ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উপলব্ধ ভিডিও ফুটেজ থেকে মনে হয় উভয় ইঞ্জিনে থ্রাস্টের অভাব বা পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ এই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহতদের, যাদের মধ্যে অনেকেরই পোড়া দাগ ছিল, নিকটবর্তী সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই দুর্ঘটনায় কেবলমাত্র একজন যাত্রী, ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যবসায়ী বিশ্বাস কুমার রমেশ, বেঁচে যান। তিনি ১১এ আসনে বসেছিলেন, যা জরুরি প্রস্থানের কাছে অবস্থিত। তাঁর বেঁচে যাওয়াকে অলৌকিক বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। তিনি দূরদর্শনকে বলেন, “আমি জানি না কীভাবে আমি বেঁচে গেলাম। আমার চোখের সামনে এয়ারহোস্টেস এবং অন্যান্য যাত্রীরা মারা গেলেন।”
তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকার একটি উচ্চ-পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের ফলে তদন্তে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এএআইবি-র তদন্ত দুর্ঘটনার কারণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ahmedabad) দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “ধ্বংসের দৃশ্য হৃদয়বিদারক।” যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই ঘটনাকে “বিধ্বংসী” বলে বর্ণনা করেছেন। বোয়িংয়ের সিইও কেলি অর্টবার্গ শোক প্রকাশ করে তদন্তে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিদেশ ভ্রমণকারীদের জন্য Forex Cards কতটা উপকারী? জেনে নিন উপকারিতা
জনমানসে প্রভাব
এই দুর্ঘটনা ভারতের বিমান চলাচলের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এটি গোটা দেশে শোকের ছায়া ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, কারণ দুর্ঘটনাটি আবাসিক এলাকায় ঘটেছে। সরকারের উপর এখন চাপ রয়েছে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দায়ীদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের।
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর দুর্ঘটনা ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য একটি বড় ধাক্কা। ব্ল্যাক বক্সের তথ্য এবং এএআইবি-র তদন্ত এই দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে সহায়ক হবে। বিশ্বাস কুমার রমেশের অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া এই ট্র্যাজেডির মধ্যেও একটি আশার আলো (ahmedabad)। তবে, এই ঘটনা বিমান নিরাপত্তা এবং জরুরি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। সরকার এবং এয়ারলাইন্সের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।