উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার রাজ্য পুলিশ নিয়োগে প্রাক্তন অগ্নিবীরদের (agniveers) জন্য ২০ শতাংশ সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এই সংরক্ষণ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যার মধ্যে রয়েছে সিভিল পুলিশ কনস্টেবল, প্রোভিন্সিয়াল আর্মড কনস্টেবুলারি (পিএসি), ঘোড়সওয়ার পুলিশ কনস্টেবল এবং ফায়ারম্যান।
উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে
উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, এই কোটা অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে চার বছরের সামরিক সেবা (agniveers)সম্পন্ন করা প্রাক্তন অগ্নিবীরদের নাগরিক সেবায় সম্পৃক্ত করার জন্য প্রবর্তিত হয়েছে। এই পদক্ষেপটি অগ্নিবীরদের (agniveers)জন্য সেবা-পরবর্তী কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান এবং জাতীয় প্রতিরক্ষায় তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার উত্তরপ্রদেশের বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এই সিদ্ধান্ত অগ্নিবীরদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণকে রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজে লাগানোর একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অগ্নিবীর কারা? (agniveers)
অগ্নিবীররা (agniveers)হলেন ভারত সরকার কর্তৃক ২০২২ সালের জুন মাসে চালু করা অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত যুবক-যুবতীরা। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী—সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে তরুণ, প্রযুক্তিবিদ এবং গতিশীল প্রোফাইলের কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা। এই প্রকল্পের অধীনে ১৭.৫ থেকে ২৩ বছর বয়সী প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন। নির্বাচিত হওয়ার পর, অগ্নিবীররা চার বছরের জন্য সেবা প্রদান করেন, যার মধ্যে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ এবং তিন বছর ছয় মাসের সক্রিয় দায়িত্ব পালন অন্তর্ভুক্ত থাকে।
চার বছর পর কী হয়?
চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, প্রায় ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরদের মেধা এবং কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীতে স্থায়ী ভূমিকার জন্য নির্বাচিত করা হয়। বাকি কর্মীদের প্রায় ১১-১২ লক্ষ টাকার ‘সেবা নিধি’ প্যাকেজ প্রদান করে মুক্তি দেওয়া হয়, যাতে কোনও পেনশন সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকে না। উত্তরপ্রদেশ সরকারের ২০ শতাংশ পুলিশ পদ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত এই প্রশিক্ষিত তরুণদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি অগ্নিবীরদের (agniveers)নাগরিক ভূমিকায় সম্পৃক্ত করার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
শর্মিষ্ঠার অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে
সংরক্ষণের বিবরণ
উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সংরক্ষণ নীতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী সুরেশ কুমার খান্না সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সংরক্ষণটি সাধারণ, এসসি, এসটি এবং ওবিসি—সব বিভাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যদি কোনও অগ্নিবীর এসসি বিভাগের হন, তবে সংরক্ষণ এসসি বিভাগের মধ্যে প্রয়োগ হবে; যদি ওবিসি হন, তবে ওবিসি বিভাগের মধ্যে।”
এছাড়াও, অগ্নিবীরদের (agniveers)জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত বিশেষ বয়স শিথিলতা প্রদান করা হবে। এই সংরক্ষণ কনস্টেবল পুলিশ, পিএসি কনস্টেবল, ঘোড়সওয়ার পুলিশ এবং ফায়ারম্যান—এই চারটি বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশের উদ্যোগ
অর্থমন্ত্রী খান্না আরও জানিয়েছেন, “হরিয়ানা এবং ওড়িশার মতো রাজ্যগুলি প্রাক্তন অগ্নিবীরদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভা এখন ২০ শতাংশ অনুভূমিক সংরক্ষণের অনুমোদন দিয়েছে, যা একটি সাহসী এবং উদার উদ্যোগ।” তিনি বলেন, “এটি কেবল তাদের সেবাকে স্বীকৃতি দেয় না, বরং তাদের সামরিক সেবার পরেও জাতীয় নিরাপত্তা অবকাঠামোতে অবদান রাখার সুযোগ নিশ্চিত করে।” এই পদক্ষেপ উত্তরপ্রদেশকে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অগ্রণী ভূমিকায় রাখছে।
অগ্নিপথ প্রকল্পের পটভূমি
কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালে অগ্নিপথ প্রকল্প চালু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র বাহিনীর বয়স প্রোফাইল কমানো এবং তরুণ প্রজন্মকে সামরিক সেবায় সম্পৃক্ত করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অগ্নিবীররা(agniveers) স্বল্পমেয়াদী সেবার জন্য নির্বাচিত হন এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন গতি সঞ্চার করে। তবে, চার বছর পর তাদের সেবা-পরবর্তী কর্মসংস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। উত্তরপ্রদেশের এই সংরক্ষণ নীতি সেই প্রশ্নের একটি সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নিয়োগের সময়সীমা ও প্রভাব
এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার অধীনে প্রথম ব্যাচের নিয়োগ ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নীতি অগ্নিবীরদের (agniveers)জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করবে এবং তাদের সামরিক প্রশিক্ষণকে রাজ্য পুলিশের কার্যক্রমে কাজে লাগানোর সুযোগ দেবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা হয়েছে, যেখানে অনেকে বলেছেন যে অগ্নিবীরদের সামরিক প্রশিক্ষণ পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই ২০ শতাংশ সংরক্ষণ নীতি অগ্নিবীরদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। এটি তাদের সামরিক সেবার পর নাগরিক জীবনে পুনর্বাসনের একটি কার্যকর পথ প্রশস্ত করে। এই উদ্যোগ কেবল অগ্নিবীরদের (agniveers)সেবাকে সম্মান জানায় না, বরং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় উত্তরপ্রদেশের এই উদার সংরক্ষণ নীতি অন্য রাজ্যগুলির জন্যও একটি নজির স্থাপন করতে পারে।