ভোটার তালিকা (Voter List) সংশোধন বা Special Summary Revision (SIR) ঘিরে এবার দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। বিহারে এসআইআর ঘিরে শুরু হওয়া তর্ক-বিতর্ক ও আইনি লড়াই গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এবার সেই একই পথে পা ফেলেছে উত্তর-পূর্বের অশান্ত রাজ্য মণিপুর। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া এবার আরও বড় আকার নিতে চলেছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিহারের পরেই মণিপুরে ভোটার তালিকার প্রাথমিক সংশোধন কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু রয়েছে, এবং পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারিত ২০২৭ সালে। এই অবস্থায় ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ায় অন্তত ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এই বিপুল পরিমাণ বাদ পড়া নাম ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন ওঠে, ভোটার বাদ দেওয়ার ভিত্তি ঠিক কতটা স্বচ্ছ? অভিযোগ উঠে, আধার কার্ড, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড – এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিও একাধিক ক্ষেত্রে মান্যতা পায়নি।
এই জটিলতা নিয়ে মামলা যায় সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে শীর্ষ আদালত কমিশনকে নির্দেশ দেয় – আধার, রেশন কার্ড, ভোটার আইডিকে বৈধ নথি হিসেবে গণ্য করতে হবে। এই রায়ের পর বিহার ও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের রাজ্যগুলিতে এসআইআর কার্যক্রমে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা করা হলেও, বিতর্ক থামছে না।
মণিপুরে বর্তমান পরিস্থিতি আরও জটিল। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত অশান্তি এবং প্রশাসনিক ভেঙে পড়া ব্যবস্থার জেরে এখন সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। এর মধ্যেই ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো স্পর্শকাতর কাজ শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক একটি রাজ্যে আলাদাভাবে এসআইআর কার্যক্রম চালিয়ে নির্বাচন কমিশন তার লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের উপর। কোর্ট যদি সমস্ত নথিকে গ্রহণযোগ্য ঘোষণা করে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা চায়, তবে কমিশনের পরিকল্পনা মসৃণভাবে এগোতে পারবে।
তবে, রাজনৈতিকভাবে এই সংশোধনী প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীরা বলছেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে কিছু গোষ্ঠী রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চাইছে। মণিপুরে চলতে থাকা রাষ্ট্রপতি শাসন এবং জাতিগত উত্তেজনার মাঝে যদি ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়, তা হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সমাজতাত্ত্বিকরা।
সব মিলিয়ে, বিহারের পর মণিপুরে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধনী শুরু হওয়ায় আগামী দিনে এই ইস্যু আরও বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কতটা স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য রাখা যায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।