পাক এয়ার স্ট্রাইকের পরেই ভারতকে সঙ্গী করে আফগানিস্তানের নয়া পদক্ষেপ

afghanistan-offers-india-access-to-mining-sites-geopolitical-shift

কাবুল ২৫ নভেম্বর: ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন এক উত্তেজনা ও সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে আফগানিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তালিবান শাসনের কারণে দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা আফগানিস্তানের বিশাল খনিজ সম্পদ এবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে।

Advertisements

কারণ আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে দেশটির বহুদিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকা খনিগুলোতে প্রবেশ ও বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্দরমহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

   

Tata Sierra-র কোন ভ্যারিয়েন্ট কেমন? বুকিং শুরু কবে থেকে জানুন

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের এক গবেষণা অনুসারে, আফগানিস্তানের ১,৪০০-র বেশি খনি অঞ্চলে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের অনাবিষ্কৃত সম্পদ মজুত রয়েছে। তামা, সোনা, লৌহ আকরিক, প্রাকৃতিক গ্যাস, ক্রোমাইট, কোবাল্ট, লিথিয়াম—এমন বিপুল সম্পদের ভাণ্ডার দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকলেও তালিবান শাসন, সুরক্ষাহীনতা, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রযুক্তিগত অক্ষমতার কারণে কখনও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়নি।

সেই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতকে এই খনিগুলিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও একটি বড় কৌশলগত সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত এমন সময় যখন বিশ্বব্যাপী লিথিয়াম, ক্রোমাইট ও মূল্যবান খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতা তীব্র।

কূটনৈতিক মহলের মত, আফগানিস্তানের এই সিদ্ধান্ত ভারত-মধ্য এশিয়া সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও চীনের প্রভাব নিয়ে চলা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কারণ বর্তমানে আফগানিস্তানে পরিকাঠামো ও খনি ব্যবসায় চীনের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রভাবশালী। এমন অবস্থায় ভারতকে খনি ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে কাবুলের নতুন বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির ভারসাম্য চীনের হাতে রেখে দিতে রাজি নয় তারা।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি এই খনিগুলিতে বিনিয়োগ ও কার্যক্রম শুরু করতে পারে, তাহলে শুধু কৌশলগত প্রভাবই নয়, শিল্প, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিশাল সুবিধা মিলবে। বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি, স্টিল, নির্মাণ—সব ক্ষেত্রেই ভারতের চাহিদা প্রতিনিয়ত দ্রুত বাড়ছে, এবং আফগানিস্তানের খনিজভান্ডার সেই ঘাটতি পূরণে এক বিরাট সুযোগ।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, এই প্রস্তাব আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল বহন করছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গেছে। কয়েক বছর আগেও আফগানিস্তানে কৌশলগত আলোচনা বা সম্পদ অ্যাক্সেসের ক্ষেত্রে ভারতের নাম প্রথম সারিতে শোনা যেত না। কিন্তু সদ্য তালিবান সরকারের পক্ষ থেকেও ভারতের প্রতি এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি—মোদি সরকারের কূটনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত।

তবে সুযোগ যতই বিশাল হোক, চ্যালেঞ্জ কম নয়। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখনও অনিশ্চিত। নিরাপত্তা পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, কর্মী ও পরিকাঠামোগত ঝুঁকি সবই ভারতের বৃহৎ বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতকে স্পষ্টভাবেই হিসেব কষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তবুও, সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে ভারত একটি নতুন ভূরাজনৈতিক অধ্যায়ের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক লাভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন নজর থাকবে দিল্লি কীভাবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয় কারণ এই সিদ্ধান্ত ভারতের ভবিষ্যৎ শিল্প, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও প্রযুক্তি শক্তিকে দীর্ঘমেয়াদে রূপান্তরিত করতে পারে।