ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এক আফগান নাগরিককে (Afghan Citizen) গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত ব্যক্তির নাম মহম্মদ ইউসুফ, যিনি ইয়াহা খান নামে পরিচিত। তিনি জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট (Fake Indian Passport) তৈরি করেছিলেন এবং ২০১৮ সাল থেকে কটকে গোপনে বসবাস করছিলেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সতর্কতার কারণে এই জালিয়াতি ধরা পড়ে এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০ জুন ২০২৫ তারিখে, মহম্মদ ইউসুফ ওরফে ইয়াহা খান দুবাই থেকে ফ্লাইট নম্বর ৬ই-১৪৮৮-এ ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। তিনি ইমিগ্রেশন কাউন্টারে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট (নম্বর: ইউ১৩৮০২৫১) পেশ করেন, যেখানে তার নাম ইয়াহা খান, পিতার নাম মোতি খান এবং ঠিকানা কটক হিসেবে উল্লেখ ছিল। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা শ্রীমতী সমাপিকা পট্টনায়ক, ডিএসপি, ইমিগ্রেশন, বিপিআই বিমানবন্দর, এবং তার দল সন্দেহজনক আচরণের কারণে পাসপোর্টটির বিশদ যাচাই করেন। যাচাইয়ের সময় জানা যায় যে, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তার বিরুদ্ধে একটি গোপন লুক আউট সার্কুলার (এলওসি) জারি করা হয়েছিল।
পরবর্তী সিস্টেম যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ব্যক্তিটি আসলে মহম্মদ ইউসুফ, একজন আফগান নাগরিক, যিনি মূল পাসপোর্ট নম্বর ০২৪৫৭৬৫৫ ব্যবহার করেন। তিনি ২০১৮ সালে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন এবং জাল পরিচয় গ্রহণ করে কটকের পেটন সাহি, বক্সি বাজার এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ধৃত ব্যক্তি জাল আধার কার্ড (নং ২৩৪৭ ১৬৪৯ ৪৩৭৮), ভোটার আইডি (নং ওয়াইএনওয়াই১৪৯৩০৩০), প্যান কার্ড (নং বিইআরপিকে১৬৪৬ই), ড্রাইভিং লাইসেন্স (নং ওআর০৫১৯৯১০০০২৫৬২) এবং পাসপোর্ট তৈরি করেছিলেন। এই জাল নথিগুলি ব্যবহার করে তিনি ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন এবং রাজ্যের বাইরেও ভ্রমণ করেছিলেন।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মহম্মদ ইউসুফ তার আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। তিনি নিজেকে আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দা মহম্মদ ইউসুফ, পিতা মহম্মদ নাসিম খান মোতি খান বলে স্বীকার করেন। তার কাছ থেকে জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, একটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (নং ওডি ০৫ এইউ ৩২৮৬), একটি ভিভো ওয়াই১০০এ মোবাইল ফোন, ৩০,০০০ টাকা নগদ, বিদেশি মুদ্রা এবং দুটি সোনার কানের দুল জব্দ করা হয়। এছাড়া, তার বাড়ি থেকে ইয়াহা খানের নামে ব্যাঙ্ক নথি এবং আরও ৫০,০০০ টাকা নগদ জব্দ করা হয়, যার কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
মহম্মদ ইউসুফ ওরফে ইয়াহা খানের বয়স প্রায় ৫৪ বছর। তিনি আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দা এবং তার আসল পাসপোর্ট নম্বর ০২৪৫৭৬৫৫। তিনি জাল পরিচয়ে কটকের বক্সি বাজারের পেটন সাহি এলাকায় বসবাস করছিলেন। তিনি জাল নথি ব্যবহার করে ভারতে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন এবং বিদেশ ভ্রমণের জন্যও এই নথি ব্যবহার করেছিলেন।
শ্রীমতী সমাপিকা পট্টনায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হয়েছে। তদন্তে আরও জানা গেছে যে, তিনি কীভাবে এই জাল নথি তৈরি করেছিলেন এবং এর পিছনে কোনও বৃহত্তর নেটওয়ার্ক জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জাল নথি ব্যবহার করে একজন বিদেশি নাগরিক কীভাবে এতদিন ধরে ভারতে বসবাস করতে পারলেন, তা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা সরকারী সংস্থাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
পুলিশ ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা এই ঘটনার গভীর তদন্ত করছেন। জাল নথি তৈরির পিছনে সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
এই ঘটনা কটক এবং ওড়িশার জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে চাইছেন, কীভাবে একজন বিদেশি নাগরিক এত সহজে ভারতীয় নথি তৈরি করতে পারলেন এবং এত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের মধ্যে বসবাস করলেন। এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের উপরও চাপ সৃষ্টি করেছে, কারণ জনগণ এখন আরও কঠোর নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি করছে।
মহম্মদ ইউসুফের গ্রেফতারি ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধুমাত্র জাল নথির ব্যবহারের একটি মামলা নয়, বরং ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং ইমিগ্রেশন নীতির দুর্বলতাগুলিকে প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত নথি যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রোধ করা।