অ্যাডভোকেট বিক্রম সিং গ্রেফতার কাণ্ডে চাঞ্চল্য

advocate-vikram-singh-arrest-supreme-court-order-2025

নয়াদিল্লি, ১২ নভেম্বর: দেশজুড়ে আইনজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে অ্যাডভোকেট বিক্রম সিং-এর গ্রেফতারি কাণ্ড। হরিয়ানার গুরগাঁও পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) গত ৩১ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করে, একাধিক অপরাধমূলক মামলায় অভিযুক্তদের দেওয়া তথাকথিত “স্বীকারোক্তি”র ভিত্তিতে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এই গোটা প্রক্রিয়াই আইনবিরুদ্ধ এবং বিক্রম সিং-কে তাঁর নিজের ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক সাক্ষ্য দিতে চাপ দেওয়া হয়েছিল।

Advertisements

আজ সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় বড় নির্দেশ দিয়েছে। আদালত রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে গুরগাঁওয়ের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিক্রম সিং-কে “আজই মুক্তি” দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।

   

অর্জুন সাঁতারুর বাড়ি সুকান্ত! দিলেন দিল্লিতে আমন্ত্রণ

অ্যাডভোকেট বিকাশ সিং যিনি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং প্রাক্তন বার অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, “এই মামলার আইনজীবীকে বারবার নিজের ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তিনি সেই বেআইনি নির্দেশ মানেননি। এরপর পুলিশ তাঁকে দু’বার তলব করে, অভিযুক্তদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া বিবৃতির ভিত্তিতে। যখন তিনি তথাকথিত চ্যাটের মাধ্যমে কোনও প্রমাণ দেননি, তখন তাঁকে ৩১ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “গ্রেফতারের সময় তাঁকে কোনো গ্রাউন্ডস অব অ্যারেস্ট দেখানো হয়নি, যা সরাসরি আইনের পরিপন্থী। আরও আশ্চর্যজনকভাবে, STF-এর রিমান্ড রিপোর্টে লেখা আছে যে সেদিন রাতেই তাঁর কাছ থেকে একটি ‘স্বীকারোক্তি’ নেওয়া হয়েছে যা প্রায় অসম্ভব এবং অস্বাভাবিক।” এই ঘটনায় শুধু আইনজীবী মহলই নয়, মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজও ক্ষুব্ধ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একজন আইনজীবী যদি তার ক্লায়েন্টের পক্ষ নিতে না পারেন, তাহলে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা কতটা সুরক্ষিত?

একজন সিনিয়র বার কাউন্সিল সদস্য বলেন, “এটা শুধু একজন অ্যাডভোকেটের উপর আক্রমণ নয়, এটা পুরো লিগ্যাল ফ্র্যাটারনিটির উপর আক্রমণ। যদি পুলিশ চাইলে একজন আইনজীবীকেও ভয় দেখাতে পারে, তাহলে বিচারব্যবস্থার ভিত্তি কেঁপে উঠবে।”

Advertisements

সূত্রের খবর, বিক্রম সিং মূলত কয়েকটি সংবেদনশীল মামলায় ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে কাজ করছিলেন। সম্প্রতি যেসব অভিযুক্ত ব্যক্তিদের STF হেফাজতে নিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে ‘বিবৃতি’ নেওয়া হয়, যেখানে বিক্রম সিং-এর নাম টানা হয়। তবে বিকাশ সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, “এই তথাকথিত বিবৃতি গুলি হেফাজতে থাকা অবস্থায় জোর করে আদায় করা হয়েছে।”

আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানির সময় বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানায় “একজন আইনজীবীকে নিজের ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। পুলিশের আচরণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” আদালত রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেয় অবিলম্বে গুরগাঁও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিক্রম সিং-এর মুক্তি নিশ্চিত করতে।

এই রায়ের পর আইনজীবী মহলে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দিল্লি, গুরগাঁও, এবং চণ্ডীগড়ে একাধিক বার অ্যাসোসিয়েশন আজ মিটিং ডেকে পুলিশের এই ভূমিকার নিন্দা করেছে। দেশের অন্যতম প্রবীণ আইনজীবী এক মন্তব্যে বলেন, “আজকের দিনটা বিচারব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আদালত দেখিয়ে দিল আইনজীবী শুধু পেশাদার প্রতিনিধি নন, তিনি আইনের রক্ষকও।”

তবে এখনও পুলিশের তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। STF সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের প্রয়োজনে বিক্রম সিং-কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল এবং গ্রেফতারের পর তাঁকে আইনসম্মতভাবে রিমান্ডে নেওয়া হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশে এখন তাঁর মুক্তি নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার পর ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং পুলিশি আচরণ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আইনজীবী বিক্রম সিং-এর গ্রেফতারি কাণ্ড।