ভারতের আদানি গ্রুপের প্রধান গৌতম আদানি (Gautam adani in bribery case) এবং তার সঙ্গী সাতজন ব্যক্তি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় ঘুষ ও প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, যেমন রয়টার্স এবং ব্লুমবার্গ, ২১ নভেম্বর এই খবরটি প্রকাশ করেছে। এ মামলায়, (Gautam adani in bribery case) আদানি এবং তার সহযোগীরা আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের প্রতারণা এবং ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।
আমেরিকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) এই মামলাটি দায়ের করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে আদানি গ্রুপ ভারতের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে যাতে তারা সোলার এনার্জি প্রকল্পগুলির জন্য চুক্তি পেতে সক্ষম হয়। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ও আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদানি, (Gautam adani in bribery case) তার ভাগ্নে সাগর আদানি, আদানি গ্রীন এনার্জির এক্সিকিউটিভরা, এবং আজুর পাওয়ার গ্লোবাল লিমিটেডের সিরিল কাবানেস, সবাইকে একটি বড় সিকিউরিটিজ এবং ওয়্যার ফ্রড কনস্পিরেসির অংশীদার হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই মামলায় (Gautam adani in bribery case) তাদের বিরুদ্ধে “সিকিউরিটিজ এবং ওয়্যার ফ্রডে অংশ নেওয়া এবং মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতি দিয়ে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের এবং বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ তোলার জন্য” অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, গৌতম আদানি (Gautam adani in bribery case) সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণা করার সময়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-elect ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার পর, আদানি আমেরিকায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তবে এটি এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে যে আদানির এই বিনিয়োগ ঘোষণার পেছনে কিছু অবৈধ তৎপরতা থাকতে পারে।
এ মামলার মূল অভিযোগ হচ্ছে যে আদানি গ্রুপ এবং তার সহযোগীরা ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছে। তারা সোলার এনার্জি প্রকল্পগুলির জন্য চুক্তি পেতে এই কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ। এসব চুক্তির মাধ্যমে আদানি গ্রুপ বিশাল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে, যা পরে আমেরিকার বাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। গৌতম আদানির বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, মার্কিন বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদেরকে প্রতারণা করা এবং তাদের পুঁজির অপব্যবহার করা।
এছাড়াও, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জানিয়েছে যে, আদানি গ্রুপ এবং এর কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মার্কিন বাজারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন, যা বিনিয়োগকারীদের ভুল পথে পরিচালিত করেছে এবং তাদেরকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। এই ঘটনায় শুধু আমেরিকান বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং এটি ভারতের ব্যবসায়িক পরিবেশকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে কিছু সূত্র থেকে জানা গেছে যে তারা এই অভিযোগকে অসত্য এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। আদানি গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সব সময় আইনের মধ্যে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং তাদের সব নির্মাণ কাজ, সোলার এনার্জি প্রকল্পসহ, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা আরও দাবি করেছেন যে, এই মামলাটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
এছাড়া, আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা একাধিক আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি এবং দেশীয় আইন মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং সবসময় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে তাদের ব্যবসা করে। তবে, মার্কিন আদালত এই বিষয়টি নির্ধারণ করবে যে আদানি গ্রুপের কর্মকাণ্ড আইনি ছিল কিনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আদানির সম্পর্কের বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়েছে। ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার সময় আদানি তাকে অভিনন্দন জানান এবং এর পরপরই তিনি আমেরিকায় বৃহৎ পরিমাণে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে যে সমস্ত প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন, সেগুলি বিশেষভাবে এনার্জি সেক্টরকে সহজ করতে এবং অধিকভাবে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার দিকে নির্দেশিত ছিল। আদানি গ্রুপ, বিশেষ করে সোলার এনার্জি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল এবং এটি অনেকাংশে ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
তবে, বর্তমানে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এবং মার্কিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে এটি আদানি গ্রুপের জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারে, এবং এটি শুধুমাত্র তাদের ব্যবসায়িক খ্যাতির জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।