তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek) কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, “কেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের কী করা উচিত এবং কখন করা উচিত তা ঠিক করবেন?” তিনি অভিযোগ করেছেন, মোদী সরকার ২০১৪-এর আগের কংগ্রেস সরকারকে ‘রিমোট কন্ট্রোল্ড’ সরকার বলে সমালোচনা করতেন।
কিন্তু তখন রিমোট অন্তত ভারতে থাকত। এখন তাদের সরকারই আমেরিকার হাতে ‘রিমোট কন্ট্রোল’ দিয়ে চলছে। অভিষেকের দাবি, ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেউই কোনও প্রতিবাদ করেননি। পাশাপাশি, তিনি সীমান্তে বিএসএফ-এর ব্যর্থতার জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন।
বুধবার সংসদ প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী ৯০ মিনিটের বক্তৃতায় ২০০ বার জওহরলাল নেহরুর নাম নিয়েছেন। দেশের প্রতিটি সমস্যার জন্য তিনি নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধীকে দায়ী করেন। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য কে দায়ী? মানুষ ২০১৪ সালে প্রচুর আশা নিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিল, কিন্তু আজ তাদের আশায় জল ঢেলে দিয়েছে এই সরকার।”
তিনি আরও বলেন, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাই দায়ী। “পহেলগাঁওয়ে কীভাবে চারজন জঙ্গি ১০০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকল? সীমান্তে সেনা কাদের অধীনে? বিএসএফ কাদের নিয়ন্ত্রণে? এটা মোদী এবং অমিত শাহের দায়িত্ব। তাহলে দোষটা কার?” অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন।
অভিষেকের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, মোদী সরকার আমেরিকার প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “মোদীজি বলতেন, ২০১৪-এর আগে সরকার ছিল রিমোট কন্ট্রোল্ড। তখন রিমোট কন্ট্রোল অন্তত ভারতের হাতে ছিল। এখন সেই রিমোট কন্ট্রোল আমেরিকার হাতে চলে গেছে।” তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন।
কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে মোদী বা অমিত শাহ কেউই এই দাবি খণ্ডন করেননি। অভিষেক বলেন, “এটা কি ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত নয়? কেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভারতের সিদ্ধান্ত নেবেন? আমাদের দেশের সিদ্ধান্ত আমাদের নেতারা নেবেন।”অভিষেক আরও অভিযোগ করেছেন, মোদী সরকার বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দায়ী করলেও, সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিএসএফ-এর।
তিনি বলেন, “যদি বাংলায় অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকছে, তবে এটা বিএসএফ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতা। প্রথমে অমিত শাহের পদত্যাগ করা উচিত।” তিনি পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “এই হামলা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রমাণ। যেখানে সেনা এবং বিএসএফ কেন্দ্রের অধীনে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা কীভাবে ঘটল? এর জবাব মোদী এবং শাহকে দিতে হবে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াঅভিষেকের এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অভিষেককে সমর্থন করে বলেছেন মোদী সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে নেহরু এবং কংগ্রেসকে দায়ী করে। কিন্তু সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের।”
গর্ভপাত মামলায় নাবালিকার পরিচয় ফাঁস নয়, বম্বে হাইকোর্টের কড়া বার্তা পুলিশকে
অন্যদিকে, বিরোধীরা এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মোদী সরকার জাতীয় নিরাপত্তায় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধরনের মন্তব্য করছেন।”