‘সীমান্তে উস্কানি চালালে নিজের কবর নিজেই খুঁড়বে’, পাকিস্তানকে নিশানা আবদুল্লাহর

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছেন, সীমান্ত থেকে ক্রমাগত উসকানি চালিয়ে যাওয়া কেবল তাদেরই ক্ষতি করবে। বৃহস্পতিবার জম্মুতে পাকিস্তানের বিমান…

omar-abdullah warns pakistan

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেছেন, সীমান্ত থেকে ক্রমাগত উসকানি চালিয়ে যাওয়া কেবল তাদেরই ক্ষতি করবে। বৃহস্পতিবার জম্মুতে পাকিস্তানের বিমান হামলাকে তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর শহরের উপর সবচেয়ে “গুরুতর আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি পাকিস্তানকে অপারেশন সিঁদুরের পর চলতে থাকা সামরিক সংঘাতের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছেন, যারা বিমান হামলার হুমকি নিষ্ক্রিয় করেছেন এবং একটিও ড্রোনকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে।

   

জম্মুতে বিমান হামলা একটি গুরুতর আক্রমণ

৮ মে রাতে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীর সহ ভারতের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের একাধিক সামরিক ও বেসামরিক নির্মাণ লক্ষ্য করে ৫০টিরও বেশি ড্রোন দিয়ে বড় ধরনের হামলা চালায়। জম্মু, উধমপুর, সাম্বা, আখনুর, নাগরোটা এবং পাঠানকোট ছিল এই হামলার প্রধান লক্ষ্য।

ওমর আবদুল্লাহ (abdullah)  জানিয়েছেন, এই হামলা জম্মু শহরের উপর ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সবচেয়ে গুরুতর আক্রমণ। তিনি বলেন, “এই হামলা শুধু আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, বরং পাকিস্তানের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের প্রমাণ।”

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলার বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেমন এল-৭০ গান, জেডইউ-২৩এমএম, শিলকা প্ল্যাটফর্ম এবং কাউন্টার-ইউএএস সরঞ্জাম ব্যবহার করে ড্রোনগুলোকে নিরপেক্ষ করা হয়। আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে হুমকি মোকাবিলা করেছে। একটিও ড্রোন তাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে পারেনি, যা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শক্তি প্রমাণ করে।”

ভারতের ‘পিনাকা’ পাকিস্তানের জন্য যমরাজ! মাত্র 44 সেকেন্ডে 72 টি রকেট নিক্ষেপ করে

অপারেশন সিঁদুর ও পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া (abdullah) 

এই হামলা অপারেশন সিন্দুরের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটেছে, যেখানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা’র নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়। এই অপারেশনটি ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে।

অপারেশন সিঁদুরে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়, যা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ৮-৯ মে রাতে ভারতের উপর ড্রোন হামলা চালায় এবং জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একাধিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে।

এই হামলায় পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলায় বেসামরিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১২ জন বেসামরিক নাগরিক ও একজন সৈনিক নিহত হন। ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “পাকিস্তানের এই পদক্ষেপগুলো কেবল উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। তাদের উচিত উসকানি বন্ধ করে শান্তির পথে ফিরে আসা। অন্যথায়, এই সংঘাতের পরিণতি তাদের জন্যই ক্ষতিকর হবে।”

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি

ভারতীয় সেনাবাহিনী এই হামলার জবাবে পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর উপর প্রতিশোধমূলক নির্ভুল হামলা চালিয়েছে। লাহোরে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনা সহ অন্যান্য কৌশলগত অবস্থান এই হামলার লক্ষ্য ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “কাইনেটিক এবং নন-কাইনেটিক ক্ষমতা ব্যবহার করে হুমকিগুলো দ্রুত নিরপেক্ষ করা হয়েছে। ভারত তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” তিনি স্থানীয় জনগণকে শান্ত থাকার এবং সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের উপর চাপ

আবদুল্লাহ (abdullah)  পাকিস্তানকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেছেন, “এই ধরনের হামলা তাদের নিজেদের জন্যই ধ্বংসাত্মক হবে। পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ করা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আলোচনায় আসা।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং সীমান্তে আগ্রাসী নীতি তাদের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর তাদের নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কাতার, স্পেন, ইরান, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের প্রতি আহ্বান

ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই কঠিন সময়ে আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। পাকিস্তানের উসকানির জবাব আমাদের সেনাবাহিনী দিচ্ছে, কিন্তু জনগণের সমর্থন এবং শান্তি বজায় রাখা সমান গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে জনগণের নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য ও জরুরি প্রস্তুতি

হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা র সঙ্গে সমন্বয় করে রাজ্যের হাসপাতালগুলো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা নিশ্চিত করছি যে কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের জনগণ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।”

জম্মুতে (abdullah) পাকিস্তানের বিমান হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার একটি প্রতিফলন। ওমর আবদুল্লাহর সতর্কবার্তা এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে তুলে ধরে। পাকিস্তানের উসকানি অব্যাহত থাকলে এই সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। তবে, আবদুল্লাহর (abdullah) শান্তির আহ্বান এবং জনগণের প্রতি ঐক্যের বার্তা এই সংকটময় মুহূর্তে জম্মু ও কাশ্মীরের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements