জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন সরকার আজ পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) একটি বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক আয়োজন করছে। এই বৈঠকটি গত ২২ এপ্রিল বাইসারান উপত্যকায় একটি নৃশংস জঙ্গি হামলার এক মাসেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যে হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক।
পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে
এই হামলা (pahalgam) অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং বুকিং ও ভ্রমণে তীব্র হ্রাস দেখা গেছে। আজকের বৈঠকের উদ্দেশ্য এই উদ্বেগগুলো মোকাবিলা করা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং অঞ্চলের পর্যটন পুনরুজ্জীবনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা। সন্ত্রাসবাদের আতঙ্ক পর্যটকদের মনে গেঁথে গেছে যা কাশ্মীরের পর্যটন যে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।
প্রথম বৈঠকে কি হয়েছিল (pahalgam)
পহেলগাঁও ক্লাবে (pahalgam) মন্ত্রিসভার সদস্যরা ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন । এর আগে, গত ১৫ মে, জঙ্গি হামলার পর পর্যটন খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওমর আবদুল্লাহ সিভিল সেক্রেটারিয়েটে হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। এই বৈঠকে তিনি স্টেকহোল্ডারদের সরকারের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং পর্যটন পুনরুজ্জীবনের জন্য তাদের প্রস্তাব বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন।
বৈঠকে বক্তৃতার সময় মুখ্যমন্ত্রী এই বছরের অমরনাথ যাত্রা শেষ হওয়ার পর পর্যটন বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে একটি ব্যাপক পর্যটন পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি একটি ব্যাপক প্যাকেজের প্রস্তাব করেন, যার মধ্যে হোটেল, হাউসবোট, শিকারা, ট্যাক্সি, হস্তশিল্প এবং দুবাইয়ের মতো অনন্য শপিং ফেস্টিভ্যালের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য সমর্থন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আবদুল্লাহ সম্প্রতি পর্যটক ট্যাক্সি, ডিলাক্স মিনিবাস এবং গেস্ট হাউসে বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেওয়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দুর্বলতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, হামলার পর পর্যটন খাতে মন্দার কারণে এই উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে তিনি জানান, জম্মু ও কাশ্মীর এখনও পর্যটন গন্তব্য হিসেবে আগ্রহ ধরে রেখেছে।
তিনি প্রচারমূলক কার্যক্রম এবং ফ্যামিলিয়ারাইজেশন (এফএএম) ট্যুরের জন্য উৎসাহের কথা উল্লেখ করেন। তিনি স্টেকহোল্ডারদের আশ্বাস দেন যে, তিনি আর্থিক সহায়তা এবং সুদের ছাড়ের বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্থাপন করবেন।
আজকের বৈঠকের বিষয়বস্তু
আজ পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) অনুষ্ঠিত বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়ার এবং পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলা শুধুমাত্র জীবনহানির কারণই নয়, বরং জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন খাতে দীর্ঘমেয়াদী ছায়া ফেলেছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। হামলার পর থেকে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল অনেক স্থানীয় ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
মুখ পুড়বে জেনেও বাম ঘাঁটি কেরলে তৃণমূলের প্রার্থী! প্রচারে মমতা?
পর্যটন জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতি
পর্যটন জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, উপত্যকা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটককে আকর্ষণ করে। তবে, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা এই শিল্পের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। হোটেল, হাউসবোট এবং অন্যান্য পর্যটন-সম্পর্কিত ব্যবসাগুলো বুকিংয়ে তীব্র হ্রাসের সম্মুখীন হয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করেছে। বিশেষ করে, যারা সম্প্রতি পর্যটন-সম্পর্কিত ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন, তারা এই মন্দার কারণে ঋণ পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ওমর আবদুল্লাহ সরকার (pahalgam) এই সংকট মোকাবিলায় একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করছে। তিনি পর্যটন শিল্পের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং তাদের প্রস্তাব ও উদ্বেগ শুনছেন। তার প্রস্তাবিত পর্যটন পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনায় শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তাই নয়, বরং উদ্ভাবনী প্রচারমূলক কার্যক্রম এবং নতুন পর্যটন পণ্যের উন্নয়নও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দুবাইয়ের মতো শপিং ফেস্টিভ্যালের ধারণা অঞ্চলের পর্যটনকে নতুন মাত্রা দিতে পারে, যা স্থানীয় হস্তশিল্প এবং ব্যবসার প্রচারে সহায়ক হবে।
বৈঠকের তাৎপর্য
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রেখে সরকার পর্যটকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক এই বার্তা দেওয়ার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র স্থানীয়দের কাছে নয়, বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছেও এই বার্তা পৌঁছে দেবে যে জম্মু ও কাশ্মীর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং পর্যটনের জন্য নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ফিরে আসতে প্রস্তুত।
এই বৈঠকের মাধ্যমে সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। আবদুল্লাহ ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা এবং সুদের ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করবেন। এই সহায়তা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যারা পর্যটন খাতের মন্দার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের (pahalgam) পর্যটন শিল্পের পুনরুজ্জীবন শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্যই নয়, বরং অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পহেলগাঁওয়ের এই বিশেষ বৈঠক এই লক্ষ্য অর্জনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পর্যটকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।