পাঞ্জাবের আম আদমি পার্টি সরকার (aap) বুধবার (২৬ মার্চ, ২০২৫) রাজ্য বিধানসভায় ২.৩৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। এই বাজেটে নেশার বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথমবারের মতো একটি “ড্রাগ সেন্সাস” পরিচালনার জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সেন্সাসের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নেশার প্রকোপ, নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলির ব্যবহার এবং জনগণের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আম আদমি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই উদ্যোগকে “নেশামুক্ত পাঞ্জাব” গড়ার দিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি “উড়তা পাঞ্জাব” থেকে “বদলতা পাঞ্জাব” গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অংশ।
আরো দেখুন ভারতে সফরে আসছেন মেসি, খেলবেন প্রীতি ম্যাচ?
অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার হনন নোটিশ কংগ্রেসেরভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা, শুল্ক কমতে পারে হার্লে বাইক ও বোর্বন হুইস্কির
আম আদমি পার্টি (aap)অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা জানিয়েছেন
পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা, যিনি এই বাজেট পেশ করেছেন, জানিয়েছেন যে ড্রাগ সেন্সাসের তথ্য ব্যবহার করে আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে নেশার সমস্যা নির্মূলের জন্য একটি কার্যকর এবং বৈজ্ঞানিক কৌশল তৈরি করা হবে। “এই সেন্সাস পাঞ্জাবের প্রতিটি পরিবারকে কভার করবে। আমরা নেশার বিস্তার, নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলির ব্যবহার এবং জনগণের সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করব। এই উদ্যোগের জন্য সরকার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করবে,” বলেন চিমা। এটি তাঁর চতুর্থ বাজেট পেশ।
আপ প্রধান কেজরিওয়াল সামাজিক মাধ্যমে বাজেটের প্রশংসা করে লিখেছেন, “পাঞ্জাব বাজেট ২০২৫-২৬ নেশামুক্ত, স্বাস্থ্যবান এবং সমৃদ্ধ পাঞ্জাবের দিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ! নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং ক্রীড়া অবকাঠামোয় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এএপি সরকার মাটিতে সত্যিকারের পরিবর্তন আনছে। এখন হবে ‘বদলতা পাঞ্জাব’, ‘উড়তা পাঞ্জাব’ নয়।”
‘যুদ্ধ নশিয়ান বিরুদ্ধ’
নেশার বিরুদ্ধে সরকারের ‘যুদ্ধ নশিয়ান বিরুদ্ধ’ (নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ) অভিযান ১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। এই অভিযানের অধীনে এখন পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে ২,২৪৮টি এফআইআর দায়ের করে ৩,৯৫৭ জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, মাদক পাচারকারীদের কাছ থেকে ১৩৭.৭ কেজি হেরোইন-সহ বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের পুলিশ মহানির্দেশক (DGP) গৌরব যাদব মঙ্গলবার সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের নিজ নিজ জেলায় প্রধান মাদক সরবরাহকারী এবং পাচারকারীদের চিহ্নিত করে সাত দিনের মধ্যে তালিকাভুক্ত করতে। এই নির্দেশের লক্ষ্য রাজ্যের মাদক ব্যবসার সরবরাহ শৃঙ্খলকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা।
নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
ডিজিপি যাদব একটি চিঠিতে বলেন, “নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য তথ্য থেকে জানা গেছে যে, রাস্তায় হেরোইন এবং অন্যান্য মাদকের প্রাপ্যতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে, মাদক আইন প্রয়োগকে আরও পেশাদার এবং সূক্ষ্মভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রাম এবং শহুরে মহল্লায় মাদক বিক্রি করা পাচারকারী এবং তাদের সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।”
নেশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের তীব্র মনোযোগের অংশ হিসেবে, চিমা জানান, ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালানের গতিবিধি নজরদারি করতে ৫,০০০ গার্ড নিয়োগ এবং অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তি স্থাপনের জন্য ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলি সীমান্তে মাদক পাচার রোধে দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা রেখা গড়ে তুলবে।
মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি বাজেটে অনুপস্থিত
এদিকে, এএপি-র অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি—পাঞ্জাবের মহিলাদের প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা—এই বাজেটে উল্লেখ করা হয়নি। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান জানিয়েছিলেন যে, এই পরিমাণ বাড়িয়ে ১,১০০ টাকা করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই সুবিধা সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছায়নি, যার ফলে মহিলা সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলি থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চিমা বলেন, “আমাদের সরকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জনগণকে দেওয়া অনেক গ্যারান্টি পূরণ করেছে। হ্যাঁ, মহিলাদের জন্য সাহায্যের গ্যারান্টি এখনও বাকি রয়েছে। আমরা জরিপ করাচ্ছি এবং শীঘ্রই এটিও পূরণ করা হবে।” তবে, বাজেটে এই প্রতিশ্রুতির কোনও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকায় বিরোধীরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
নেশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য
‘যুদ্ধ নশিয়ান বিরুদ্ধ’ অভিযানের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে চিমা বলেন, “এই অভিযান শুরুর পর থেকে আমরা বড় সাফল্য পেয়েছি। হাজার হাজার মাদক পাচারকারী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ উন্নয়নের জন্যও উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ করা হয়েছে, যা পাঞ্জাবকে একটি সমৃদ্ধ রাজ্যে পরিণত করবে।
এই বাজেট এবং ড্রাগ সেন্সাসের ঘোষণা পাঞ্জাবে নেশার বিরুদ্ধে লড়াইকে নতুন মাত্রা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পূরণে বিলম্ব নিয়ে সরকারের উপর সমালোচনার মুখ বাড়ছে। আগামী দিনে এই বিষয়গুলি কীভাবে এগোয়, তা দেখার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক মহল অপেক্ষায় রয়েছে।