পদ্ম শিবিরকে হারিয়ে মোদী রাজ্যে জয়জয়কার আম আদমির

গুজরাটের বিসাবদর বিধানসভা উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, আম আদমি পার্টি (AAP)-র প্রার্থী গোপাল ইটালিয়া ১৭,৫৫৪ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। তিনি মোট ৭৫,৯৪২ ভোট…

AAP wins in gujarat

গুজরাটের বিসাবদর বিধানসভা উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, আম আদমি পার্টি (AAP)-র প্রার্থী গোপাল ইটালিয়া ১৭,৫৫৪ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। তিনি মোট ৭৫,৯৪২ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র কিরীট পটেলকে পরাজিত করেছেন। এই জয় গুজরাটের রাজনীতিতে এএপি-র ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি উল্লেখযোগ্য ইঙ্গিত এবং বিজেপি-র জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিসাবদর (AAP) আসনটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এএপি-র তৎকালীন বিধায়ক ভূপেন্দ্র ভায়ানি পদত্যাগ করে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর শূন্য হয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর ১৯ জুন, ২০২৫-এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৫৬.৮৯% ভোটার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়। আপ এই আসনে তাদের প্রাক্তন গুজরাট প্রেসিডেন্ট গোপাল ইটালিয়াকে প্রার্থী করেছিল, যিনি ২০১৫ সালের পাটিদার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পরিচিত। বিজেপি কিরীট পটেলকে প্রার্থী করলেও, তারা গত ১৮ বছর ধরে এই আসনে জয়লাভ করতে পারেনি।

   

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আপের নেতারা এই জয়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। দিল্লির আপ (AAP) প্রধান সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “এটি আপের জন্য একটি বিরাট জয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছিলেন যে আপ দিল্লির পরাজয়ের পর শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আমরা গুজরাটে বিজেপি-র গড়ে জয়লাভ করেছি।” তিনি আরও বলেন, “এই জয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে এএপি-র জাতীয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের প্রমাণ।”

গোপাল ইটালিয়া, যিনি নির্বাচনের প্রচারে আপ (AAP) শীর্ষ নেতা কেজরিওয়াল এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সমর্থন পেয়েছিলেন, ভোট গণনার প্রথম দিক থেকেই এগিয়ে ছিলেন। দ্বিতীয় রাউন্ডের পর তিনি ৩৯১ ভোটের সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে যান, এবং ১৭তম রাউন্ডে তিনি ১৪,৪০৪ ভোটের ব্যবধানে নেতৃত্ব নেন। শেষ পর্যন্ত, ২১তম রাউন্ডের গণনা শেষে তিনি ১৭,৫৫৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। কংগ্রেস প্রার্থী নীতিন রানপরিয়া তৃতীয় স্থানে থেকে উল্লেখযোগ্য ভোট পাননি।

এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, এএপি-র অফিসিয়াল হ্যান্ডেল থেকে বলা হয়েছে, “গুজরাটের বিসাবদরে গোপাল ইটালিয়ার বিরাট জয় বিজেপি-র জন্য একটি কঠিন শিক্ষা।(AAP) জনগণের সমর্থনে আপের ‘কাজের রাজনীতি’ আবারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” স্থানীয় ভোটাররাও গোপালের জয়কে উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়, যারা এএপি-র শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

বিজেপি-র জন্য এই পরাজয় একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা গুজরাটে ১৮২ আসনের বিধানসভায় ১৬১টি আসন নিয়ে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছে। বিসাবদরে তাদের ২০০৭ সালের পর জয়ের আশা এবারও পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ফলাফল গুজরাটে বিজেপি-র একচ্ছত্র আধিপত্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে এবং এএপি-কে তৃতীয় শক্তি হিসেবে উত্থানের সুযোগ দিয়েছে।

Advertisements

পশ্চিম এশিয়ার অশান্তির জেরে বিপাকে ৩৩ কোটি ভারতীয়র হেঁসেল

এই উপনির্বাচনে বিসাবদরের পাশাপাশি গুজরাটের কড়ি আসনেও ভোটগ্রহণ হয়েছিল, যেখানে বিজেপি-র রাজেন্দ্র চাবড়া প্রায় ৪০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তবে বিসাবদরে এএপি-র জয় গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যা ঐতিহ্যগতভাবে বিজেপি এবং কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল।

গোপাল ইটালিয়া (AAP) জয়ের পর বলেন, “এই জয় বিসাবদরের জনগণের বিজয়। আমরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করব এবং আপের কাজের রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যাব।” তিনি বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং কর্মসংস্থানের  উপর জোর দিয়ে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এই জয়ের পর আপ (AAP) গুজরাটে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই ফলাফল আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুজরাটে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। বিসাবদরের ফলাফল গুজরাটের রাজনৈতিক গতিপথে নতুন দিশা দেখাতে পারে, যেখানে এএপি এখন একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।