উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রস ভোটিংয়ে নজরে আপ-আরজেডির সংসদ

নয়া দিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Vice Presidential Election) বড় ধরনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের পক্ষে ১৫…

Vice Presidential Election

নয়া দিল্লি, ১০ সেপ্টেম্বর: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Vice Presidential Election) বড় ধরনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের পক্ষে ১৫ জন সাংসদ ক্রস-ভোটিং করেছেন, যার মধ্যে আম আদমি পার্টি (এএপি) থেকে ৪ জন, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) থেকে ১ জন এবং কংগ্রেস থেকে ২ জন সাংসদ রয়েছেন।

এই ঘটনা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের ঐক্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন ৪৫২ ভোট পেয়ে ভারতের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, যেখানে ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি পেয়েছেন ৩০০ ভোট।

   

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর এনডিএ দাবি করেছে যে, তাদের প্রত্যাশিত ভোটের তুলনায় ১৪টি অতিরিক্ত ভোট এসেছে। এনডিএ-র মোট ৪২৫ সাংসদ এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ১১ জন সাংসদের সমর্থন মিলিয়ে তাদের ভোট হওয়ার কথা ছিল ৪৩৮। কিন্তু রাধাকৃষ্ণনের ৪৫২ ভোট পাওয়ার ফলে স্পষ্ট হয়েছে যে বিরোধী শিবিরের কিছু সাংসদ এনডিএ-র পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

সূত্রের খবর, এএপি-র ৪ জন, আরজেডি-র ১ জন এবং কংগ্রেসের ২ জন সাংসদ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি) থেকে কিছু সাংসদ ক্রস-ভোটিংয়ে জড়িত ছিলেন।

ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি ৩২৪ সাংসদের সমর্থন পাওয়ার কথা থাকলেও, তিনি মাত্র ৩০০ ভোট পেয়েছেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ দাবি করেছিলেন যে তাদের ৩১৫ জন সাংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দিয়েছেন।

কিন্তু ফলাফল এই দাবির বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে। ১৫টি ভোট অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় বিরোধী শিবিরের কিছু নেতা দাবি করেছেন যে এই অবৈধ ভোটগুলো তাদের সাংসদদেরই ছিল। তবে, অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ ভোট ছাড়াও কিছু সাংসদ সচেতনভাবে এনডিএ-র পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

এই ক্রস-ভোটিংয়ের ঘটনা বিরোধী জোটের অভ্যন্তরীণ ফাটলের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে এএপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। দিল্লি এবং হরিয়ানায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে এই দুই দলের মধ্যে বিরোধ স্পষ্ট।

এছাড়া, এএপি-র রাজ্যসভা সাংসদ স্বাতী মালিওয়ালের সঙ্গে দলের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দ্বন্দ্বও ক্রস-ভোটিংয়ের জল্পনাকে উসকে দিয়েছে। সূত্রের মতে, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডের কিছু সাংসদ রাধাকৃষ্ণনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, কারণ তিনি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

Advertisements

কংগ্রেস এই ক্রস-ভোটিংয়ের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি বৈঠক ডাকতে চলেছে। দলটি এএপি, আরজেডি, জেএমএম এবং শিবসেনা (ইউবিটি)-র সাংসদদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে। বিজেপি নেতা অমিত মালবিয়া সামাজিক মাধ্যমে বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছেন, “ইন্ডিয়া ব্লকের ৩১৫ ভোটের দাবি থাকলেও তাদের প্রার্থী মাত্র ৩০০ ভোট পেয়েছেন। ১৫টি ভোট কোথায় গেল?” তিনি আরও দাবি করেছেন, প্রায় ৪০ জন বিরোধী সাংসদ এনডিএ-র পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যদিও এই দাবি অতিরঞ্জিত বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে রাধাকৃষ্ণনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “আমরা আশা করি নতুন উপরাষ্ট্রপতি সংসদীয় ঐতিহ্যের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখবেন এবং বিরোধীদের জন্য সমান স্থান ও সম্মান নিশ্চিত করবেন।”

তিনি সুদর্শন রেড্ডিকে তাঁর “নীতিনিষ্ঠ লড়াইয়ের” জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অন্যদিকে, রেড্ডি পরাজয় মেনে নিয়ে বলেছেন, “আমি এই ফলাফলকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অটুট বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছি।”

এই নির্বাচনে মোট ৭৮১ জন সাংসদের মধ্যে ৭৬৭ জন ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে ১৫টি ভোট অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। বিজু জনতা দল (৭ জন), ভারত রাষ্ট্র সমিতি (৪ জন), শিরোমণি অকালি দল (১ জন) এবং দুজন স্বতন্ত্র সাংসদ ভোটদানে বিরত ছিলেন। এই ক্রস-ভোটিংয়ের ঘটনা আগামী বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া ব্লকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের Brahmos-NG ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কাছাকাছি, চাহিদা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে

এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিরোধী জোটের ঐক্য এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আগামী দিনে এই ক্রস-ভোটিংয়ের তদন্ত কী ফল দেয়, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন কংগ্রেস এবং তাদের জোটসঙ্গীদের দিকে।