দিল্লি সরকার (AAP) সম্প্রতি একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী ১.৫ লক্ষ টাকা এবং মন্ত্রীরা ১.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের উচ্চমানের মোবাইল ফোন কিনতে পারবেন, এবং এই খরচ সরকার বহন করবে। এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য সীমাহীন ফোন বিলের খরচও সরকারের তরফে পরিশোধ করা হবে।
এই সিদ্ধান্ত ২০১৩ সালের একটি পুরনো নির্দেশিকার সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনে ঘোষণা করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য মোবাইল ফোনের খরচের সীমা ছিল ৫০,০০০ টাকা এবং মন্ত্রীদের জন্য ৪৫,০০০ টাকা। এই নতুন নির্দেশিকা ৯ জুলাই জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট (জিএডি) দ্বারা জারি করা হয়েছে।
তবে, এই সিদ্ধান্ত তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে আম আদমি পার্টি (আপ ) এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে দিল্লির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। এএপি প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি সরকার নির্বাচনের সময় মহিলাদের জন্য প্রতিশ্রুত ২,৫০০ টাকা মাসিক ভাতার প্রকল্প কোথায়?
আপের সমালোচনা
আপ নেতা এবং দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে এক্স-এ পোস্ট করেছেন, “দিল্লি বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য ১.৫/১.২৫ লক্ষ টাকার ফোন এবং সীমাহীন বিলের পরিকল্পনা পাস হয়েছে।
উন্নয়ন হচ্ছে, অন্তত কারো জন্য তো হচ্ছে! ২৫০০ টাকা মহিলাদের দেওয়া হয়নি, প্রাইভেট স্কুলের ফি বেড়েছে। তিনি আরও বলেছেন দিল্লিতে বানভাসি হল, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম, হাজার হাজার বিধবার পেনশন বন্ধ তাতে সরকারের ভূমিকা কি। তিনি বলেছেন বুলডোজার দিয়ে গরিবদের ঘর ভাঙা হচ্ছে সরকারের এদেশে। এসব অরাজকতা ছাড়া কিছু নয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, মহিলাদের জন্য ২,৫০০ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, কিন্তু এখনও একজন মহিলাও এই ভাতা পাননি। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেছেন, “মন্ত্রীদের ফোন কেনার জন্য কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি, তবে মহিলাদের জন্য কমিটির পিছনে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।”
বিজেপি’র প্রতিক্রিয়া
দিল্লি বিজেপি’র মুখপাত্র প্রবীণ শঙ্কর কাপুর এই সমালোচনার জবাবে বলেছেন, “এএপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ১ লক্ষ টাকার ফোন কেনার বিরোধিতা করছেন, তবে তারা কি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কেনা দামি ফোন এবং ১.৩৫ কোটি টাকার গাড়ির বিষয়ে কিছু বলবেন?” তিনি আরও বলেছেন, “জনপ্রতিনিধিদের মোবাইল ফোন তাদের রেকর্ড রুম হিসেবে কাজ করে এবং নিরাপত্তার কারণে উচ্চমানের ফোন ব্যবহার করা হয়।”
মহিলা সমৃদ্ধি যোজনার অবস্থা
বিজেপি নির্বাচনের আগে দিল্লির মহিলাদের জন্য মাসিক ২,৫০০ টাকার মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ঘোষণা করেছিলেন যে, এই প্রকল্প ৮ মার্চ, ২০২৫, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চালু হবে এবং এর জন্য ৫,১০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলারা, যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকার কম এবং যারা সরকারি চাকরি করেন না বা অন্য কোনো সরকারি আর্থিক সাহায্য পান না, তারা এই ভাতার জন্য যোগ্য হবেন।
এই প্রকল্পের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করার কথা ছিল, যেখানে মহিলারা নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে, এএপি অভিযোগ করেছে যে, এই প্রকল্প এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি এবং একটি কমিটি গঠন করে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।
দিল্লির জনগণের সমস্যা
আপ নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতিশি দাবি করেছেন যে, বিজেপি সরকার দিল্লির জনগণের জন্য জরুরি সমস্যাগুলির সমাধানের পরিবর্তে নিজেদের বিলাসিতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ভরদ্বাজ বলেছেন, “দিল্লিতে জলাবদ্ধতা, ট্রাফিক জ্যাম, স্কুলের ফি বৃদ্ধি, বিধবাদের পেনশন বন্ধ এবং গরিবের ঘর ভাঙার মতো সমস্যাগুলি থাকলেও বিজেপি’র অগ্রাধিকার মন্ত্রীদের জন্য দামি ফোন কেনা।”
তিনি আরও বলেছেন, “নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই এই প্রকল্প পাস হবে, কিন্তু এখনও মহিলারা কোনো টাকা পাননি।”
‘ব্লাড মানি’ আলোচনায় আশার আলো, ইয়েমেনে স্থগিত নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড
বিজেপি’র প্রতিশ্রুতি
মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বলেছেন, “আমাদের সংকল্প পত্রে করা সমস্ত প্রতিশ্রুতি আমরা দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করব।” তিনি জানিয়েছেন, মহিলা সমৃদ্ধি যোজনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে তিনি নিজে রয়েছেন। এই কমিটিতে মন্ত্রী প্রবেশ সাহিব সিং, আশিস সুদ এবং কপিল মিশ্রাও রয়েছেন। তবে, এএপি’র অভিযোগ, এই কমিটি কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল।
দিল্লি সরকারের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে, বিজেপি সরকার দাবি করছে যে তারা মহিলাদের জন্য প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, অন্যদিকে এএপি অভিযোগ করছে যে বিজেপি নিজেদের বিলাসিতার জন্য তৎপর, কিন্তু জনগণের জন্য প্রতিশ্রুতি পূরণে উদাসীন। এই বিতর্ক আগামী দিনে দিল্লির রাজনীতিতে আরও উত্তপ্ত আকার নিতে পারে।