রাজধানীতে বুলডোজার অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আপ

দিল্লির আম আদমি পার্টির (AAP) সভাপতি সৌরভ ভরদ্বাজ দিল্লিতে গত পাঁচ মাস ধরে চলমান বুলডোজার অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে…

AAP protest for buldozer action

দিল্লির আম আদমি পার্টির (AAP) সভাপতি সৌরভ ভরদ্বাজ দিল্লিতে গত পাঁচ মাস ধরে চলমান বুলডোজার অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি সরকার দরিদ্র মানুষের মাথার উপর থেকে ছাদ কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের জীবিকা ধ্বংস করছে।

ভরদ্বাজ বলেছেন, “যদি দিল্লিতে ৪০-৫০ লক্ষ মানুষকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়, আমরা প্রতিবাদ শুরু করব। যদি বিজেপি সরকার (AAP)  তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে দিল্লির ৪০ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। আর যেদিন ৪০-৫০ লক্ষ মানুষ দিল্লির রাস্তায় নামবে, সেদিন রেখা গুপ্তার সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও পড়ে যাবে।”

   

তিনি আরও কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “গত পাঁচ মাস ধরে দিল্লিতে বুলডোজার চলছে, দরিদ্রদের মাথার উপর থেকে ছাদ কেড়ে (AAP) নেওয়া হচ্ছে, তাদের জীবিকা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস কোথায়? কংগ্রেস কেন চুপ? রাহুল গান্ধী এখনও এই দরিদ্র মানুষদের জন্য এগিয়ে আসেননি কেন? এটা স্পষ্ট যে দিল্লির নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপিকে সাহায্য করেছে।”

দিল্লিতে গত পাঁচ মাস ধরে বিভিন্ন বস্তি এলাকায় বুলডোজার অভিযান চলছে, যা দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ডিডিএ) এবং স্থানীয় পৌরসংস্থার নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এই অভিযানের লক্ষ্য অবৈধ নির্মাণ এবং দখলকৃত জমি উদ্ধার করা। তবে, এএপি এবং অন্যান্য সমালোচকদের মতে, এই অভিযান দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের উপর আঘাত হানছে, যারা বছরের পর বছর ধরে এই বস্তিগুলিতে বসবাস করছেন।

দক্ষিণ দিল্লির কালকাজি, পূর্ব দিল্লির কালিন্দী কুঞ্জ এবং উত্তর-পূর্ব দিল্লির সীলমপুরের মতো এলাকায় ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযানে হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে, এবং অনেকের জীবিকা, যেমন ছোট দোকান বা ফুটপাথের ব্যবসা, ধ্বংস হয়ে গেছে।

আপ (AAP) দাবি করেছে যে এই অভিযানগুলি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির দরিদ্র জনগণকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভরদ্বাজের মতে, এই উচ্ছেদ অভিযানে কোনও পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেই, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার পথে বসছে। তিনি বলেন, “এই অভিযান কেবল ঘরবাড়ি ভাঙছে না, মানুষের স্বপ্ন এবং ভবিষ্যৎও ধ্বংস করছে।”

সৌরভ ভরদ্বাজ কংগ্রেসের নীরবতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। (AAP) তিনি অভিযোগ করেছেন যে দিল্লির বস্তিবাসীদের এই সংকটে কংগ্রেস কোনও ভূমিকা পালন করছে না। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী নিজেকে দরিদ্রদের পক্ষে কথা বলার নেতা হিসেবে দাবি করেন, কিন্তু দিল্লির এই সংকটে তিনি কোথায়? কংগ্রেসের এই নীরবতা প্রমাণ করে যে তারা বিজেপির সঙ্গে মিলে কাজ করছে।” এএপি নেতারা মনে করেন, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের এই নীরবতা রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে সুবিধা দিচ্ছে।

কংগ্রেসের দিল্লি ইউনিট এখনও এই অভিযোগের কোনও সরাসরি জবাব দেয়নি। তবে, কিছু কংগ্রেস নেতা ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন যে তারা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কিন্তু এই ইস্যুতে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য এএপির সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

Advertisements

দিল্লির বস্তিবাসীদের মধ্যে এই উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। (AAP) কালিন্দী কুঞ্জের এক বাসিন্দা, রমেশ কুমার, বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সব এই ঠিকানায়। হঠাৎ বুলডোজার এসে আমাদের ঘর ভেঙে দিল। আমরা এখন কোথায় যাব?” স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের কোনও পূর্ব নোটিশ দেওয়া হয়নি এবং পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।

‘সাপের কামড়ে সরাসরি হাসপাতালে চলো’, বার্তা পৌঁছে দিতে আলিপুরদুয়ারে সাইকেল র‍্যালি

এএপি এই ইস্যুতে জনগণকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে। দলটি ইতিমধ্যে কয়েকটি বস্তি এলাকায় প্রতিবাদ সভা করেছে এবং ঘোষণা করেছে যে তারা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে এই উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। ভরদ্বাজ বলেন, “আমরা আদালতে যাব এবং রাস্তায়ও লড়ব। দিল্লির জনগণ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করবে।”

বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন যে উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ নির্মাণ দূর করার জন্য প্রয়োজনীয়। দিল্লি বিজেপির একজন মুখপাত্র বলেন, “অবৈধ দখলদারির কারণে দিল্লির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা শহরকে পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক করতে চাই।” তবে, তারা পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে স্পষ্ট কোনও উত্তর দেয়নি।

সৌরভ ভরদ্বাজের এই বিবৃতি দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এএপি এই উচ্ছেদ অভিযানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরছে, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাদের প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে।

কংগ্রেসের নীরবতা এবং বিজেপির অবস্থান এই ইস্যুকে আরও জটিল করেছে। দিল্লির জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ এবং এএপির প্রতিবাদের ডাক এই সংকটকে আরও তীব্র করতে পারে। আগামী দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে যায়, তা দিল্লির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News