জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) ডোডা জেলার আম আদমি পার্টি (AAP)-র একমাত্র বিধায়ক মেহরাজ মালিককে সোমবার কঠোর পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (PSA)-র অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অভিযোগে এই আইনের আওতায় আটক করা হয়েছে। এটি জম্মু ও কাশ্মীরে প্রথমবারের মতো কোনো বর্তমান বিধায়কের বিরুদ্ধে পিএসএ-র অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা।
মেহরাজ মালিক, যিনি ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডোডা আসন থেকে জয়ী হয়ে এএপি-র প্রথম বিধায়ক হিসেবে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিকের বিরুদ্ধে ১৮টি এফআইআর এবং একাধিক জনগণের অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করেছেন, ত্রাণ ও উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং ডোডা জেলায় যুবকদের উসকানি দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার এই আচরণ অঞ্চলের শান্তি ও শাসনব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। পিএসএ, যা জম্মু ও কাশ্মীরে একটি প্রশাসনিক আইন, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনা অভিযোগ বা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত আটক রাখার অনুমতি দেয়।
ডোডা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হরবিন্দর সিং-এর নির্দেশে মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে জেলে স্থানান্তর করা হচ্ছে।মেহরাজ মালিক ২০২৪ সালের জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে ডোডা আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী গজয় সিং রানাকে ৪,৫৩৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এএপি-র জন্য প্রথম জয় নিশ্চিত করেন।
তিনি ২৩,২২৮ ভোট পেয়েছিলেন। এই জয়ের মাধ্যমে এএপি জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের প্রথম রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করে, যা দলের জন্য পঞ্চম রাজ্যে বিধায়ক প্রাপ্তির মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। এএপি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল তখন মালিকের এই জয়কে “বিজেপি-র বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত বিজয়” হিসেবে উল্লেখ করে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
মালিকের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক বিতর্কিত ঘটনায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে, তিনি হিন্দুদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। বিজেপি বিধায়ক বিক্রম রনধাওয়া তখন তার বিরুদ্ধে পিএসএ-র অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
এছাড়া, মে মাসে ডোডার গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মধু চিব মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে হুমকি, অশ্লীল এবং লিঙ্গভিত্তিক মন্তব্য করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মালিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৩৫৬, ৭৯ এবং ৩৫১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
ডা. চিব অভিযোগ করেন, মালিক বেআইনিভাবে হাসপাতালের প্রসব কক্ষে প্রবেশ করেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচার করে রোগীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছেন।এই গ্রেফতারির ঘটনা রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এএপি-র সমর্থকরা এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছেন, দাবি করে বলেছেন যে মালিক স্থানীয় সমস্যা যেমন পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি নিয়ে কথা বলার জন্য লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
তিনি ২০১৯ সালে আর্টিকল ৩৭০ বাতিলের পর স্থানীয় সমস্যা নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং ২০২৩ সালে জম্মুর বাথিন্দি এলাকায় ভূমি উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মালিক তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “তারা আমার কণ্ঠ দমন করার চেষ্টা করবে। আমি হারব না এবং ডোডায় মাফিয়ার বিরুদ্ধে আমার লড়াই চালিয়ে যাব।”
শেষ হল DA মামলার শুনানি, রায়দান স্থগিত
এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিজেপি নেতারা মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানালেও, এএপি এই গ্রেফতারিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে। এই পরিস্থিতি অঞ্চলের রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।