ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের চলতি স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বুধবার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। আধার ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই শুরু হল শুনানি। প্রধান বিচারপতি সুর্য কান্ত সোজাসাপটা জানতে চান, “একজন বিদেশি যদি কোনওভাবে আধার কার্ড পেয়ে যায় এবং সরকারি সুবিধাও পায়, তবে কি তাকে ভোটারও বানিয়ে দেওয়া উচিত?”
আগেই আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় আধারকে ‘১২তম নথি’ হিসেবে যোগ করা যেতে পারে। কিন্তু কেবল আধার থাকার ভিত্তিতেই ভোটাধিকার কি নিশ্চিত হবে— সেই প্রশ্নই তুলল শীর্ষ আদালত।
SIR প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে সিব্বলের যুক্তি
পিটিশনারদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল SIR প্রক্রিয়ার বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ করেন। তাঁর বক্তব্য, সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে উদ্বেগ থাকতে পারে ঠিকই, কিন্তু বিহার ও কেরালার মতো রাজ্যে একই নিয়ম সবার উপর একযোগে চাপানো অন্যায়।
তিনি আরও জানান, দ্বিতীয় দফার SIR-এ ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫১ কোটি মানুষের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
এই পুরো প্রক্রিয়া ‘বর্জনমুখী’, যা অগণিত অশিক্ষিত মহিলা ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে ফেলছে।
বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) হাতে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা ‘নাগরিকত্ব স্ক্রিনিং’-এরই আরেক রূপ। সিব্বলের অভিযোগ— “আমরা এমন ভোটারদেরও এনেছি, যাদের BLO মৃত ঘোষণা করেছে!”
ECI-র ক্ষমতা নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিচারপতি জয়মল্য বাগচি জানান— নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই করতেই পারে, বিশেষত সন্দেহজনক তথ্য মিললে। Enumeration form বা তথ্য সংগ্রহপত্র সেই যাচাইয়ের অংশ। কমিশন ‘একটি নিষ্ক্রিয় ডাকঘর’ হয়ে থাকতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—
ভোটার হওয়ার জন্য ভারতের নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক (ধারা ২১, RPA ও সংবিধানের ৩২৬ অনুচ্ছেদ)।
সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ECI-র নথি পরীক্ষা করার অবশিষ্ট ক্ষমতা সর্বদাই থাকে।
‘প্রক্রিয়া নয়, সময়সীমাই সমস্যা’, সিব্বলের দাবি
সিব্বল জানান, কমিশনের ক্ষমতা নয়, বরং অযৌক্তিক দ্রুতগতির প্রক্রিয়াই সমস্যার মূলে। মাত্র দুই মাসে SIR শেষ করা সম্ভব নয়, এবং এতে সাধারণ ভোটারের ক্ষতি হবে।
গ্রামীণ ভোটারের সচেতনতা নিয়ে ভিন্নমত প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য— বিহারের অভিজ্ঞতাই প্রমাণ করে আশঙ্কার তুলনায় বাদ যাওয়া নাম কম। মাত্র তিন লক্ষের সামান্য বেশি নাম বাদ পড়েছে এবং আপত্তিও সীমিত ছিল।
তিনি বলেন, “গ্রামে ভোটদানের দিন উৎসবের মতো— তারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে শহরের মানুষের চেয়েও বেশি সচেতন।” সিব্বলের উত্তর, “অধিকার কেড়ে নিতে চাইলে, সেটিও প্রক্রিয়া মেনে নিতে হবে৷”
সিব্বল পাল্টা জানান, ভোটাধিকার রক্ষায় প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আপনি যদি আমার অধিকার কেড়ে নেন, তা-ও আপনাকে প্রক্রিয়া মেনে করতেই হবে।”
