নয়াদিল্লি: বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় দফা চলাকালীন আধার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় ব্যাখ্যা দিল নির্বাচন কমিশন। কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত বা বর্জনের ক্ষেত্রে আধারকে কোনও অবস্থাতেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। আধার শুধুমাত্র পরিচয় নিশ্চিত করার একটি মাধ্যম, এর বাইরে অন্য কোনও কাজে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
অশ্বিনী উপাধ্যায়ের পিটিশন
এই মন্তব্য আসে অ্যাডভোকেট অশ্বিনী উপাধ্যায়ের একটি পিটিশনের জবাবে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া কমিশনের হলফনামায়। উপাধ্যায়ের দাবি ছিল, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ব্যবহৃত ফর্ম–৬–এ জন্মতারিখ প্রমাণ হিসাবে আধার গ্রহণ করা হচ্ছে, যা UIDAI–এর ২০২৩ সালের বিজ্ঞপ্তির বিরোধী। তাঁর বক্তব্য, আইন অনুযায়ী আধারের ব্যবহার কেবল পরিচয় যাচাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
হলফনামায় কমিশন জানায়, সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ৯ সেপ্টেম্বরের নির্দেশনায় পরিষ্কার জানিয়েছে— RPA, 1950–এর ধারা ২৩(৪)-এর আলোকে আধার কেবল পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবহারযোগ্য। নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নয়। সেই নির্দেশ মেনে গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সব রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে আধার শুধুই পরিচয়ের মাধ্যম, নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নয়।
বিশেষ নিবিড় সংশোধন দ্বিতীয় পর্যায় Aadhaar Not Citizenship Proof
এই ব্যাখ্যার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়েছে বিশেষ নিবিড় সংশোধনের দ্বিতীয় পর্যায়। চলতি দফায় দেশের ৯টি রাজ্য এবং আন্দামান–নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ ও পুদুচেরি মিলিয়ে মোট প্রায় ৫১ কোটি ভোটার এই প্রক্রিয়ার আওতায় আসছেন। পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, কেরল, গোয়া এবং ছত্তিশগড়ে সমান্তরালভাবে চলছে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। মোট ৩২১টি জেলা এবং ১,৮৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে চলছে এই ব্যাপক উদ্যোগ।
এই পর্যায়ে BLO–রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রতিটি পরিবারের কাছে অন্তত তিনবার গিয়ে দেওয়া হচ্ছে Enumeration Form, যেখানে ভোটারদের বর্তমান ঠিকানা, বয়স, পারিবারিক তথ্যসহ প্রয়োজনীয় বিবরণ হালনাগাদ করা হচ্ছে।
টোল–ফ্রি হেল্পলাইন
ভোটাররা নিজের নাম বা পরিবারের অন্য সদস্যের নাম তালিকায় আছে কি না, তা সরাসরি যাচাই করতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে— voters.eci.gov.in–এ। BLO–র সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রয়েছে ‘Book-a-call with BLO’ সুবিধা এবং ১৯৫০ নম্বরের টোল–ফ্রি হেল্পলাইন।
নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান বিশেষজ্ঞদের মতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আধার থাকা মানেই ভারতীয় নাগরিক হওয়া নয়, এমন বার্তা স্পষ্ট হওয়ায় ভোটার তালিকা সংশোধনে অযাচিত বাদ–পড়া বা বিভ্রান্তি কমবে। পাশাপাশি ডিজিটাল পরিচয়পত্র ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করে কমিশন আরও একবার নিশ্চিত করল, নাগরিকত্বের প্রশ্ন আইনি প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হবে, আধারের মাধ্যমে নয়।


