নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ECI) অবস্থানকে সমর্থন করে জানিয়েছে, আধার কার্ডকে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না (aadhaar not a citizenship proof)। সুবিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বে বেঞ্চ বিহারের বিশেষ সারসংক্ষেপ পুনর্বিবেচনের (Special Summary Revision) বিরুদ্ধ আবেদনগুলোর শুনানিতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
বেঞ্চ বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ঠিক যে, আধারকে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গৃহীত করা যাবে না, এটি অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে।” বিচারপতি সূর্য কান্ত সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবলের কাছে স্পষ্ট করেন, “প্রথমেই দেখতে হবে কমিশনের কাছে যাচাই করার ক্ষমতা আছে কিনা। যদি না থাকে, তবে অন্য কিছু ভাবাই যাচ্ছে না। তবে ক্ষমতা থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
কপিল সিবল আদালতে আর্জি করেন, কমিশনের যাচাই প্রক্রিয়া বড় ধরনের ভোটার বর্জনের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা প্রয়োজনীয় ফর্ম জমা দিতে পারছেন না তাঁদের জন্য। তিনি জানান, ২০০৩ সালের নির্বাচনী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারদেরও পুনরায় ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়েছে এবং তা না করলে তাঁদের নাম বাতিল হয়ে যাবে, যদিও তাঁদের ঠিকানায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
সিবল বলেন, কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ৭.২৪ কোটি মানুষ ফর্ম জমা দিয়েছেন, তবুও প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম ছেঁটে ফেলা হয়েছে, অথচ মৃত্যুর বা স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো সুষ্ঠু অনুসন্ধান হয়নি। তিনি আদালতে জানান, “তারা (কমিশন) স্বীকার করেছেন যে তারা কোনো জরিপ করেনি।”
বেঞ্চ প্রশ্ন তোলে, কীভাবে ৬৫ লাখ সংখ্যাটি এসেছে এবং এই আশঙ্কা প্রমাণভিত্তিক নাকি কল্পনাপ্রসূত। বেঞ্চ বলেন, “আমরা জানতে চাই, আপনার আশঙ্কা বাস্তব নাকি কল্পিত।” বেঞ্চ আরও বলেন, যারা ফর্ম জমা দিয়েছেন তাঁরা ইতিমধ্যেই খসড়া তালিকায় আছেন।
অন্যদিকে পিটিশনের পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ করেন, কমিশন মৃত্যুর বা ঠিকানা পরিবর্তনের কারণে যে ভোটারদের বাদ দিয়েছে, সে তালিকা আদালত কিংবা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। “তারা বলে কিছু তথ্য বুথ পর্যায়ের এজেন্টদের দিয়েছে, কিন্তু অন্য কারও কাছে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তারা স্বীকার করে না,” তিনি জানান।
বেঞ্চ স্পষ্ট করেন, যদি ভোটার আধার ও রেশন কার্ডসহ ফর্ম জমা দেন, কমিশনের কর্তব্য হয় তথ্য যাচাই করা। এছাড়াও বেঞ্চ জানতে চায়, যে ভোটাররা অনুপস্থিত কাগজপত্রের নোটিফিকেশন পাওয়ার অধিকারী, তাঁদের কি যথাযথ ভাবে অবহিত করা হয়েছে কি না।
এই মামলাটি বিহারে নির্বাচনী তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। সুপ্রিম কোর্টের এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় নতুন মাইলফলক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।