কলকাতা: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা লক্ষ লক্ষ নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করবে। যোগী সরকারের নির্দেশে এখন থেকে আধার কার্ড কোনো অফিসিয়াল কাজে জন্মতারিখের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। এর ফলে চাকরির আবেদন, পদোন্নতি, পেনশন, স্কুল-কলেজে ভর্তি, ভোটার আইডি তৈরি—সব ক্ষেত্রেই নাগরিকদের জন্ম সনদ, স্কুল ছাড়পত্র বা পৌরসভার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
এই নতুন নিয়মের পিছনে রয়েছে UIDAI-এর (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) স্পষ্টতা। আধার কার্ডে উল্লিখিত জন্মতারিখ প্রায়শই স্ব-ঘোষিত (সেলফ-ডিক্লেয়ার্ড) হয়, যা নির্ভরযোগ্য নয়। এই সিদ্ধান্ত শুধু উত্তরপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, মহারাষ্ট্রেও একই নিয়ম চালু হয়েছে, যা দেশব্যাপী একটি বড় বিতর্কের সূচনা করেছে।এই নির্দেশটি পরিকল্পনা বিভাগের স্পেশাল সেক্রেটারি অমিত সিংহ বাঁশালের স্বাক্ষরে জারি হয়েছে।
শাহরুখের দলের সহ-অধিনায়ক কে? তালিকায় দুই হেভি ওয়েট!
চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “আধার কার্ডে কোনো জন্ম-সংক্রান্ত অফিসিয়াল ডকুমেন্ট যুক্ত নেই, তাই এটি জন্ম সনদ বা জন্মতারিখের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।” এর আগেও জুন মাসে এই বিষয়ে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু অনেক সরকারি দফতর , স্কুল-কলেজ এবং প্রতিষ্ঠান এখনও আধার গ্রহণ করছিল।
সকল অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এবং সচিবদের বলা হয়েছে, তাদের অধীনে কোনো লেভেলেই আধারকে জন্মতারিখের প্রমাণ মানা যাবে না। যারা এর আগে শুধু আধারের ভিত্তিতে কোনো সার্টিফিকেট জারি করেছে, সেগুলো খুলে দেখে পুনরায় যাচাই করতে হবে।
UIDAI-এর মতে, আধার প্রকল্প ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল, তখন অনেকের জন্মতারিখ নথিপত্র ছাড়াই স্ব-ঘোষিতভাবে রেকর্ড করা হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ছিল। ফলে, আধারে লেখা তারিখ সঠিক হলেও তার কোনো অফিসিয়াল ব্যাকিং নেই। ইউআইডিএআই-এর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “আমরা তিন ধরনের জন্মতারিখ গ্রহণ করতাম আনুমানিক, নথিপত্র ছাড়া ঘোষিত এবং ডকুমেন্টারি প্রমাণসহ।
আনুমানিকের জন্য আমরা জানুয়ারি ১ তারিখ ডিফল্ট করে দিতাম। কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ম্যানুয়াল সনদ বন্ধ করে বারকোডযুক্ত ডিজিটাল সনদ চালু করেছে। এখন শুধু স্ক্যান করে যাচাই করা যায়।” এই ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট যে, আধার একটি ডিজিটাল পরিচয়, জন্ম সনদ বা নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়।
এই নিয়মের প্রভাব বিশাল। উত্তরপ্রদেশের মতো জনসংখ্যার রাজ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আধারকে একমাত্র প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করত। এখন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে গেলে হাই স্কুলের মার্কশিট বা জন্ম সনদ জমা দিতে হবে। পেনশনের জন্য অফিস গেলে আধার দেখালে কাজ হবে না, মিউনিসিপাল সার্টিফিকেট লাগবে।
স্কুলে ভর্তির সময়ও একই সমস্যা। বিশেষ করে দরিদ্র এবং গ্রামীণ পরিবারের লোকেরা কষ্ট পাবে, কারণ অনেকের কাছে পুরনো নথিপত্র নেই। একজন লখনউয়ের শিক্ষক বললেন, “আমার মেয়ের জন্ম সনদ হারিয়ে গেছে, এখন আবার তৈরি করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ এবং খরচসাপেক্ষ।” অন্যদিকে, সরকারের দাবি, এতে জালিয়াতি কমবে। বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী নিজেই গত সপ্তাহে সকল জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রত্যেক জেলায় টেম্পোরারি ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে। এই নতুন নিয়ম সেই প্রচেষ্টার অংশ বলে মনে হচ্ছে, যাতে জন্মতারিখের মাধ্যমে অবৈধভাবে সুবিধা নেওয়া রোধ করা যায়।
