ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে আধার কার্ড-কে (Aadhaar Card) বয়সের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। আদালত উল্লেখ করেছে যে, স্কুল ছাড়ার শংসাপত্র এবং অন্যান্য সরকারি নথিগুলি এই উদ্দেশ্যে আরও উপযুক্ত। এই রায়টি আধার কার্ডের উদ্দেশ্য ও ব্যবহার নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আধার কার্ড তৈরির উদ্দেশ্য:
২০১০ সালে আধার প্রকল্প চালু করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের নাগরিকদের জন্য একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর তৈরি করা। ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রথমবারের মতো আধার কার্ড জারির সময় এটি একটি পরিচয় প্রমাণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল, যা নাগরিকদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা গ্রহণে সাহায্য করেছিল।
আধার কার্ডের বিবর্তন:
আধার কার্ড (Aadhaar Card) প্রথম থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। যদিও এটি নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ এবং সুবিধাজনক পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল, কিন্তু এর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তী সময়ে, আধারকে সরকারি বিভিন্ন স্কিম এবং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হয়, যার ফলে এটি একটি ‘মাস্টার আইডেন্টিটি’ হয়ে ওঠে।
আধারকে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার মাধ্যমে সরকারের সিস্টেমে স্বচ্ছতা আনা হয় বলে দাবি করা হয়। তবে, এর ফলে গোপনীয়তার ক্ষতি এবং তথ্য নিরাপত্তার উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, আধার কার্ডে-র (Aadhaar Card)তথ্য সুরক্ষিত নয় এবং এটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়:
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই রায় মূলত আধার কার্ডের ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করার জন্য একটি পদক্ষেপ। আদালত জানিয়েছে যে, আধারকে বয়সের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এর মানে হল, সরকারের অন্য নথিগুলি যেমন জন্ম শংসাপত্র, স্কুল ছাড়ার শংসাপত্র প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই রায়ে আধার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে এবং নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার দাবি উঠছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় আধার কার্ডে-র (Aadhaar Card) ভবিষ্যত এবং এর উদ্দেশ্যকে নতুন করে পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনেছে। আধার প্রকল্পের সফলতা নাগরিকদের জন্য সুবিধা এনেছে, কিন্তু তার সঙ্গে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার বিষয়গুলোও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আধার ব্যবহারের নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং নাগরিকদের গোপনীয়তা সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।