৯০০০ কোটি টাকায় যমুনা নদীর প্রাণ ফেরাবে কেন্দ্র

Yamuna

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার সঙ্গে যমুনা নদী (Yamuna) পুনরুদ্ধারের বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন। এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবং সি আর পাটিল, দিল্লির গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) মন্ত্রী পারভেশ ভার্মা, কেন্দ্রীয় গৃহ সচিব গোবিন্দ মোহন এবং দিল্লির মুখ্য সচিব ধর্মেন্দ্র উপস্থিত ছিলেন।

Advertisements

এছাড়াও, গৃহ মন্ত্রণালয় এবং দিল্লি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল যমুনা নদীকে (Yamuna) পুনরুদ্ধার করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কর্মপরিকল্পনা, যা দিল্লির পরিবেশগত এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

যমুনা নদী পুনরুদ্ধারের জন্য ৪৫-দফা কর্মপরিকল্পনা

এই সপ্তাহের শুরুতে, দিল্লি জল বোর্ড মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার নেতৃত্বে একটি ৪৫-দফা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য হল রাজধানীর জলের (Yamuna) পরিকাঠামো উন্নত করা, নিকাশী ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, ট্যাঙ্কার পরিষেবায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং দূষিত যমুনা নদীকে পুনরুদ্ধার করা। এই বিস্তৃত পরিকল্পনার জন্য ৯,০০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আগামী বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দিল্লিতে বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং দূষণমুক্ত যমুনা নদী (Yamuna) নিশ্চিত করার জন্য কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা নিজে এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা এবং পিডব্লিউডি মন্ত্রী পারভেশ ভার্মা এটির নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন।

কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা

কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি সরকার যমুনা নদী (Yamuna) পরিষ্কার করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি) দিল্লির মোট ৩৬০টি ছোট-বড় নালার পুনরায় যাচাই করবে।

এছাড়াও, নদীতে পতিত ২২টি প্রধান নালার জন্য ড্রোন সমীক্ষা পরিচালিত হবে। যমুনা নদীতে দূষণ পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৬৭টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে একটি সমীক্ষা পরিচালিত হবে, এবং এর রিপোর্ট দিল্লি জল বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যমুনা নদীকে (Yamuna) পরিষ্কার করার বিষয়ে বারবার গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এর আগে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তিনি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছিলেন, যেখানে নদী পরিষ্কারের জন্য তিনটি পর্যায়ে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল: স্বল্পমেয়াদী (৩ মাস), মধ্যমেয়াদী (৩ মাস থেকে দেড় বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদী (দেড় থেকে তিন বছর)।

এই বৈঠকে নদীর প্রবাহ উন্নত করা, নিকাশী ব্যবস্থাপনা, শিল্প বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছিলেন যে, যমুনা পরিষ্কার করার কাজকে একটি ‘জন ভাগিদারি’ (জনগণের অংশগ্রহণ) আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে হবে, যাতে জনগণের মধ্যে নদীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সংযোগ তৈরি হয়।

Advertisements

অমিত শাহের নির্দেশনা এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি

শুক্রবারের বৈঠকে অমিত শাহ যমুনা নদীকে (Yamuna) শুধু একটি জলাশয় নয়, বরং একটি বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে এর পরিচ্ছন্নতাকে মোদী সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি জলশক্তি মন্ত্রণালয়কে সমস্ত নিকাশী শোধনাগার (এসটিপি) এর জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)

তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তাদের গুণমান, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিষ্কাশনের মান নির্ধারণ করা যায়। শাহ আরও বলেন, দিল্লির পানীয় জল সরবরাহ এবং নিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আগামী ২০ বছরের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

দিল্লি সরকারের প্রতিশ্রুতি

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, তাঁর সরকার যমুনাকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টিভঙ্গি হল যমুনাকে তার উৎস থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত পরিষ্কার করা। আমরা দিল্লির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর অংশের উপর কাজ করছি।

কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকার এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” গুপ্তা আরও জানান, দিল্লির ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনার অংশ, যা নদীর মোট দৈর্ঘ্যের ২% এরও কম, তবুও এটি নদীর প্রায় ৮০% দূষণের জন্য দায়ী। এই অঞ্চলটি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের জন্য অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

শিক্ষার অবস্থা সংকটে, মালদহে ক্লাস ৮-এ ‘বর্ণপরিচয়’! পৌঁছাতে পারছে না শিক্ষার আলো

অতীতের প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি

যমুনা নদীর (Yamuna) দূষণ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের নির্বাচনী পরিকল্পনায় যমুনাকে পরিষ্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং গুজরাটের সবরমতী রিভারফ্রন্টের আদলে একটি যমুনা রিভারফ্রন্ট তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। তারা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, বড়পুল্লা, শাহদরা এবং গাজীপুরের মতো নালাগুলির বর্জ্য পানি পুরোপুরি শোধন করা হবে এবং শিল্প নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।

যমুনা নদী (Yamuna) পুনরুদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় ও দিল্লি সরকারের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা দিল্লির পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ৯,০০০ কোটি টাকার বাজেট এবং তিন পর্যায়ের কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে, সরকার যমুনাকে দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। অমিত শাহ এবং রেখা গুপ্তার নেতৃত্বে এই উদ্যোগ শুধু নদী পরিষ্কারের জন্যই নয়, বরং দিল্লির জনগণের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতি।