8th Pay Commission: ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য এনসি-জেসিএম সচিবের

অষ্টম বেতন কমিশনে (8th Pay Commission) ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কমপক্ষে ২.৫৭ হওয়া উচিত, যা সপ্তম বেতন কমিশনে ব্যবহৃত হয়েছিল, অথবা এর চেয়েও বেশি হতে পারে—এমনটাই মনে…

8th Pay Commission

অষ্টম বেতন কমিশনে (8th Pay Commission) ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কমপক্ষে ২.৫৭ হওয়া উচিত, যা সপ্তম বেতন কমিশনে ব্যবহৃত হয়েছিল, অথবা এর চেয়েও বেশি হতে পারে—এমনটাই মনে করেন ন্যাশনাল কাউন্সিল-জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (এনসি-জেসিএম)-এর সচিব (স্টাফ সাইড) শিব গোপাল মিশ্র। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি গত বেতন কমিশনের তুলনায় কম হওয়া উচিত নয়। গত মাসে অষ্টম বেতন কমিশন ঘোষণার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। এনডিটিভি প্রফিট-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মিশ্র বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কমপক্ষে ২.৫৭ বা তার বেশি হওয়া উচিত।” এই ফ্যাক্টরটি মূল বেতন এবং পেনশন সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যদি অষ্টম বেতন কমিশন ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গ্রহণ করে, তবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতনে ১৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি হবে বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে। ২০১৬ সালে সপ্তম বেতন কমিশন ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর প্রস্তাব করেছিল, যার ফলে ন্যূনতম বেতন ৭,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮,০০০ টাকা হয়েছিল। এই বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বস্তি এনেছিল। তবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মিশ্র উচ্চতর ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের দাবি জানিয়েছেন।

kolkata24x7-sports-News

   

ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর নিয়ে মিশ্রের যুক্তি
উচ্চতর ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের দাবির পেছনে যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিশ্র বলেন, সপ্তম বেতন কমিশন ১৯৫৭ সালের ১৫তম ভারতীয় শ্রম সম্মেলন (আইএলসি) রেজোলিউশন এবং আয়ক্রয়েডের ন্যূনতম জীবনযাত্রার মজুরি সূত্রের ভিত্তিতে ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর নির্ধারণ করেছিল। তবে, তিনি জানান, এই পদ্ধতিগুলো এখন পুরোনো হয়ে গেছে এবং আধুনিক জীবনযাত্রার ব্যয় যেমন ইন্টারনেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা এতে প্রতিফলিত হয় না। “আমাদের বর্তমান সময়ের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়েছে,” তিনি যোগ করেন।

মিশ্র আরও বলেন, “বয়স্ক পিতামাতার যত্ন নেওয়া এখন নৈতিক এবং আইনি দায়িত্ব। ২০২২ সালের মেনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ প্যারেন্টস অ্যান্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যাক্ট অনুযায়ী এটি বাধ্যতামূলক। তাই পরিবারের ইউনিট তিনটির পরিবর্তে পাঁচটি হিসেবে গণনা করা উচিত।” এই যুক্তি দিয়ে তিনি বর্তমান জীবনযাত্রার পরিবর্তিত চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।

মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মিশ্র উচ্চতর ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মীদের জন্য একটি শোভন জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে এটি অপরিহার্য। গত কয়েক বছরে জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতি এবং ডিজিটাল পরিষেবার ব্যয় বৃদ্ধির ফল। এই পরিস্থিতিতে পুরোনো ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর আর পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি মনে করেন।

তবে, প্রাক্তন অর্থ সচিব সুভাষ গর্গ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই দাবিকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর চাওয়া মানে চাঁদের দাবি করা। এটি সম্ভবত ১.৯২-এর কাছাকাছি হবে।” গর্গের মতে, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় এই ধরনের উচ্চ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর সম্ভব নয়। তাঁর এই মন্তব্য মিশ্রের দাবির সঙ্গে একটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।

ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের প্রভাব
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হল বেতন এবং পেনশন নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। যদি ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গৃহীত হয়, তবে ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬,২৬০ টাকায় পৌঁছবে। এটি কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য ১৫৭ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। পেনশনের ক্ষেত্রেও একই হারে বৃদ্ধি হবে, যেখানে ন্যূনতম পেনশন ৯,০০০ টাকা থেকে ২৩,১৩০ টাকায় উন্নীত হবে। তবে, গর্গের প্রস্তাবিত ১.৯২ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গৃহীত হলে ন্যূনতম বেতন ৩৪,৫৬০ টাকা এবং পেনশন ১৭,২৮০ টাকা হবে, যা ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

মিশ্রের দাবি যদি সঠিক হয় এবং ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬-এ পৌঁছায়, তবে ন্যূনতম বেতন ৫১,৪৮০ টাকা এবং পেনশন ২৫,৭৪০ টাকায় উন্নীত হবে, যা ১৮৬ শতাংশ বৃদ্ধির সমান। এই বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় কর্মী এবং পেনশনভোগীদের জন্য উল্লেখযোগ্য আর্থিক স্বস্তি আনতে পারে। তবে, সরকার কোন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর গ্রহণ করবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

অষ্টম বেতন কমিশনের প্রেক্ষাপট
অষ্টম বেতন কমিশন গত জানুয়ারিতে ঘোষিত হয়েছে এবং এটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীর বেতন ও ভাতা সংশোধন করবে। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ ২০১৬ সালে কার্যকর হয়েছিল, এবং তারপর থেকে মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মিশ্রের দাবি আগামী কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এনসি-জেসিএম কেন্দ্রীয় সরকার এবং কর্মীদের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে কাজ করে। এই সংগঠনের মাধ্যমে কর্মীদের দাবি সরকারের কাছে পৌঁছানো হয়। মিশ্রের নেতৃত্বে এই সংগঠন বেতন বৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নতির জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, গর্গের মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা এই দাবি পূরণে বড় বাধা হতে পারে।

গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় কর্মীদের মধ্যে এই দাবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মিশ্রের দাবির সমর্থন করছেন, কারণ তারা মনে করেন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেতন বৃদ্ধি জরুরি। একজন কর্মী বলেন, “ইন্টারনেট, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খরচ এখন বেতনের বড় অংশ নিয়ে যায়। ২.৫৭ বা তার বেশি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর আমাদের জন্য স্বস্তি আনবে।” তবে, কেউ কেউ গর্গের মন্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, “সরকারের আর্থিক চাপের কারণে এত বেশি বৃদ্ধি সম্ভব নাও হতে পারে।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর এখনও নির্ধারিত হয়নি। মিশ্রের দাবি এবং গর্গের বাস্তবসম্মত পূর্বাভাসের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। সরকার কীভাবে এই দাবি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ভারসাম্য রাখবে, তা এখন দেখার বিষয়। অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় কর্মীদের জন্য একটি নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারে, যদি এটি তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তিত চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।