নয়াদিল্লি: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। কেন্দ্রীয় কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য বড় সুখবর নিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করল অষ্টম বেতন কমিশনের (8th Central Pay Commission) নির্দেশিকা। এর ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী এবং ৬৯ লক্ষ পেনশনভোগী সরাসরি উপকৃত হবেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, কমিশনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পাওয়ার পরেই কার্যকর করার দিন নির্ধারণ করা হবে। তবে, অধিকাংশ সম্ভাবনা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর হওয়ার।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কমিশন তার সুপারিশ তৈরির সময় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা, আর্থিক ভারসাম্য ও উন্নয়নমূলক খরচের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করবে। পাশাপাশি, পেনশন স্কিমের অপ্রদেয় ব্যয় এবং রাজ্য সরকারের আর্থিক প্রভাবও বিশ্লেষণ করা হবে।
কমিশনের পরিধির মধ্যে থাকবে কেন্দ্রীয় পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (CPSU) এবং বেসরকারি খাতের কর্মীদের বেতন কাঠামো, সুবিধা ও কর্মপরিস্থিতি। সরকারের দাবি, মন্ত্রক, রাজ্য সরকার ও বিভিন্ন কর্মী সংগঠনের সঙ্গে একাধিক পর্যায়ের পরামর্শের পরেই এই নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অষ্টম বেতন কমিশনের নেতৃত্বে থাকছেন প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাই। কমিশনের আংশিক সদস্য হিসাবে থাকছেন আইআইএম বেঙ্গালুরুর অধ্যাপক পুলক ঘোষ, এবং সদস্য-সচিব পদে রয়েছেন পেট্রোলিয়াম সচিব পঙ্কজ জৈন।
ইতিহাস বলছে, প্রায় প্রতি দশ বছর অন্তর কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়। সপ্তম বেতন কমিশন তৈরি হয়েছিল ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং তার সুপারিশ কার্যকর হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। সেই ধারা মেনেই ২০২৬ সালে নতুন বেতন কাঠামো চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মীদের আয় বাড়িয়ে দেবে এবং পেনশনভোগীদের আর্থিক সুরক্ষাও বৃদ্ধি করবে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যয়ক্ষমতা বাড়বে, ফলে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনীতির পক্ষে ইতিবাচক। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যয়ভারও কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাজ্য সরকারগুলির ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে। কারণ, বহু রাজ্যই কেন্দ্রীয় কমিশনের সুপারিশ অনুসারে নিজেদের বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে থাকে। ফলে রাজ্য কর্মচারীরাও পরোক্ষভাবে লাভবান হতে পারেন।
এই ঘোষণায় আনন্দে ভাসছে সরকারি কর্মী মহল। কর্মচারী সংগঠনগুলির একাংশ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৃদ্ধি ও আর্থিক সুবিধার দাবিতে চাপ তৈরি হচ্ছিল কর্মী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে। অষ্টম বেতন কমিশনের অনুমোদনের ফলে সেই প্রত্যাশা অনেকটাই পূরণ হতে চলেছে।


