২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections) অংশগ্রহণকারী ৮,৩০০ এর বেশি প্রার্থীর মধ্যে ৮৬ শতাংশ প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী জমানত হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ১২,৪৫৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে, যা ২০১৯ সালের ১১,৬৯২টি মনোনয়নপত্রের তুলনায় বেশি।
মনোনয়ন যাচাই ও প্রত্যাহারের পরে, ১২,০০০-এর বেশি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৮,৩৬০ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান। ২০১৯ সালের তুলনায় এই সংখ্যাও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ ওই বছর মোট ৮,০৫৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
নির্বাচনী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৭,১৯০ জন প্রার্থী তাঁদের জমানত হারিয়েছেন। সংখ্যার বিচারে এটি মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ৮৬ শতাংশ। এই ৭,১৯০ জনের মধ্যে ৫৮৪ জন জাতীয় স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, ৬৮ জন রাজ্য স্বীকৃত দলের প্রার্থী, ২,৬৩৩ জন নিবন্ধিত কিন্তু স্বীকৃতিহীন দলের প্রার্থী এবং ৩,০৯৫ জন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
২০১৯ সালের নির্বাচনে ৬,৯২৩ জন প্রার্থী তাঁদের জমানত হারিয়েছিলেন। সে সময় মোট ৩,৯২১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, যার মধ্যে মাত্র সাত জন বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ ছিল মোট বৈধ ভোটের মাত্র ২.৭৯ শতাংশ।
কেন জমানত জব্দ হয়?
লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থীদের ২৫,০০০ টাকা নিরাপত্তা অর্থ জমা দিতে হয়। তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতির প্রার্থীদের জন্য এই পরিমাণ অর্ধেক, অর্থাৎ ১২,৫০০ টাকা। নির্বাচনী আইনের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হতে না পারেন এবং তাঁর প্রাপ্ত বৈধ ভোটের সংখ্যা মোট বৈধ ভোটের এক-ষষ্ঠাংশ অতিক্রম না করে, তবে তাঁর জমা করা নিরাপত্তা অর্থ জব্দ করা হয়।
২০২৪ সালের নির্বাচনে জমানত জব্দ হওয়া প্রার্থীদের এত বড় সংখ্যায় থাকা একটি চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও স্বীকৃতিহীন দলগুলোর প্রার্থীরা প্রায়ই জনসমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হন, যা তাঁদের জমানত জব্দ হওয়ার মূল কারণ।
নির্বাচনের চিত্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০২৪ লোকসভা নির্বাচন ছিল ভারতের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। সারা দেশে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত ছিল এবং ভোটদাতাদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে, প্রার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জনসমর্থন না পাওয়ায় তাঁদের জমানত হারিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে, স্বীকৃত জাতীয় ও রাজ্য দলগুলোর তুলনায় ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পরিস্থিতি ছিল আরও খারাপ। প্রায় ৩,০৯৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছেন।
জনমত ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এই বিশাল সংখ্যক প্রার্থীর জমানত জব্দ হওয়া দেশব্যাপী রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবকেও ইঙ্গিত করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভোটদাতাদের মধ্যে প্রকৃত প্রার্থীদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দলে-দলে ভোটের মান উন্নত করার দিকে আরও কাজ করা প্রয়োজন।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের এই তথ্য ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী পরিকল্পনাগুলির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে। এটি ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তাঁদের রাজনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তাকেও তুলে ধরে।