৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন (Delhi Assembly Election 2025)। এর কয়েক দিন আগেই বড় ধাক্কা খেল শাসক দল আম আদমি পার্টি (AAP)। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ সাত বিধায়কের (MLA)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আসন্ন নির্বাচনে এই সাত বিধায়কের মধ্যে বেশিরভাগকেই আপ শীর্ষ নেতৃত্ব ভোটে লড়ার টিকিট দেয়নি। যার ফলে তারা দল থেকে ইস্তফা দেন। পদত্যাগের পর দলের দুর্নীতি সহ একাধিক ইস্যুতে নিশানা দেগেছেন আপ প্রধান কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে। ফলে নির্বাচনের ঘন্টা আগেও আলোচনা চলছে প্রাক্তন আপ বিধায়কদের দল বদলের জল্পনাকে কেন্দ্র করে।
ইস্তফা দেওয়া বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন, মেহরৌলির বিধায়ক নরেশ যাদব, ত্রিলোকপুরীর বিধায়ক রোহিত কুমার, জনকপুরীর বিধায়ক রাকেশ ঋষি, কস্তুরবা নগরের বিধায়ক মদনলাকরে ল, আদর্শ নগরের বিধায়ক পবন শর্মা, পালমের বিধায়ক ভাবনা গৌড়, এবং বিজওয়াসান থেকে বিধায়ক বি এস জুন। তাদের প্রত্যেকেই একে একে দল থেকে পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন।
মেহরৌলি আসনের বিধায়ক নরেশ যাদব, যাকে প্রাথমিকভাবে দল প্রার্থী করেছিল। কিন্তু তার নাম পরে টিকিটের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। ডিসেম্বর মাসে পাঞ্জাবের এক আদালত তাকে কোরান অবমাননার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে এবং দু’বছরের সাজা দেয়। এরপর দল তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনোনীত না করলেও, তিনি তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘‘আপ যে সততার কথা বলেছিল, এখন সেই পথে চলা বন্ধ হয়ে গেছে।’’ তার অভিযোগ, দলের মধ্যে দুর্নীতি বেড়েছে এবং আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে তারা।
ত্রিলোকপুরীর বিধায়ক রোহিত কুমারও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘আমি আন্না হাজারে নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। তখন আমি আশা করেছিলাম, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলিত এবং বাল্মীকি সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারের কাজ করবে। কিন্তু এখন সেই প্রতিশ্রুতি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’’
পালমের বিধায়ক ভাবনা গৌড়ও তার পদত্যাগপত্রে কেজরিওয়ালকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি আপনার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছি, তাই দল থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’’ কস্তুরবা নগরের বিধায়ক মদনলালও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
এছাড়া, জনকপুরীর বিধায়ক রাকেশ ঋষি এবং বিজওয়াসান থেকে বিধায়ক বি এস জুনও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তারা বলেছেন, দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের কারণে দলটি তাদের শুরুর উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে সরে গেছে।
এই পদত্যাগের ঘটনা দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে এক বড় উত্তেজনা তৈরি করেছে। আপের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এবং কংগ্রেস এবার দলের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে টানতে মরিয়া। আপ দল অবশ্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ৭০টি আসনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং তাদের লক্ষ্য তৃতীয়বারের মতো দিল্লিতে ক্ষমতায় আসা।
এদিকে, কেজরিওয়ালের দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও, আপের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করছে, তারা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনগণের জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে। দিল্লির ভোটের ফলাফলে এই বিরোধী মনোভাব কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।