বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষেরও (Supreme Court) বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কাছে বিস্তারিত জবাব দাবি করেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়া এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার এই মামলার শুনানি হয়।
কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনকে আগামী ৯ অগাস্টের মধ্যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে। এই তথ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর কাছেও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এডিআর-এর পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ কোর্টে দাবি করেন, যে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হোক।
যাতে জানা যায় কতজন মৃত, কতজন অন্যত্র স্থানান্তরিত এবং কতজনের নাম বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) সুপারিশে বাদ দেওয়া হয়েছে।নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিহারে বিশেষ গভীর পর্যালোচনা (এসআইআর) প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে ভোটার তালিকা থেকে ৬৫,৬৪,০৭৫ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ২২ লক্ষ ভোটার মৃত, ৩৬ লক্ষ ভোটার রাজ্যের বাইরে স্থানান্তরিত এবং ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক জায়গায় নথিভুক্ত ছিল। এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭.৯ কোটি থেকে কমে ৭.২৪ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। পাটনায় সর্বাধিক ৩.৯৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এরপর মধুবনীতে ৩.৫২ লক্ষ এবং পূর্ব চম্পারণে ৩.১৬ লক্ষ নাম বাদ গেছে।
এই তথ্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ড্রাফট ভোটার তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।এডিআর-এর পক্ষে প্রশান্ত ভূষণ কোর্টে বলেন, “নির্বাচন কমিশন শুধু জানিয়েছে যে ৩২ লক্ষ মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছেন, কিন্তু বাকিদের সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। এই তালিকা প্রকাশ করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু ভোটার দাবি করছেন যে তারা গণনা ফর্ম জমা দিয়েছেন, কিন্তু তাদের নাম তালিকায় নেই।” বিচারপতি সূর্যকান্ত জানান, কোর্ট নিশ্চিত করবে যে প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত ভোটার প্রয়োজনীয় তথ্য পান। তিনি নির্দেশ দেন যে নির্বাচন কমিশন শনিবারের মধ্যে বিস্তারিত হলফনামা জমা করবে এবং এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১২ অগাস্ট নির্ধারিত হয়েছে।এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব দাবি করেছেন যে তাঁর নামও ড্রাফট ভোটার তালিকায় নেই, যদিও নির্বাচন কমিশন এই দাবি খারিজ করে তাঁর নাম তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছে। আরজেডি অভিযোগ করেছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গরিব ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তারা আরও দাবি করেছে যে নির্বাচন কমিশন ড্রাফট তালিকার মুদ্রিত কপি দেওয়ার পরিবর্তে পেন ড্রাইভ বা সিডিতে তথ্য দিক, যাতে সহজে যাচাই করা যায়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই এসআইআর প্রক্রিয়া ২৪ জুন থেকে শুরু হয়েছে এবং ৩০ সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ১ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটাররা তাদের নাম যুক্ত করতে বা সংশোধনের জন্য দাবি-আপত্তি জানাতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে ফর্ম-৬ পূরণ করে অনলাইনে বা অফলাইনে নাম যুক্ত করা যাবে।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা এনভিএসপি পোর্টালে নাম যাচাই করা যাবে। এছাড়াও, স্থানীয় বিএলও বা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা যাবে।এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো মৃত, স্থানান্তরিত বা ডুপ্লিকেট ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে তালিকাকে স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করা। তবে, বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় বড় আকারে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা নির্বাচনের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলছে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যদি বড় আকারে যোগ্য ভোটারদের নাম ভুলভাবে বাদ দেওয়া হয়, তবে কোর্ট এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। পাটনার মতো শহরাঞ্চলে দ্রুত স্থানান্তর এবং প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
ভুয়ো ভোটারের জেরে বদল ভোটার কার্ড পাঠানোর নিয়ম, সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর নতুন ব্যবস্থা
এই মামলার পরবর্তী শুনানি এবং নির্বাচন কমিশনের জবাব রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। এডিআর-এর যুক্তি, এই তথ্য প্রকাশ না হলে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। আগামী দিনে এই ঘটনা বিহারের রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।