মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত ৬০, ৫০০-রও বেশি আটকে থাকার আশঙ্কা

জম্মু ও কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার (Kishtwar Cloudburst) জেলার চাশোটি গ্রামে ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত…

মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত ৬০, ৫০০-রও বেশি আটকে থাকার আশঙ্কা

জম্মু ও কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার (Kishtwar Cloudburst) জেলার চাশোটি গ্রামে ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটে যাওয়া এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখনও ৫০০-রও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছেন। এমনকি কিছু প্রশাসনিক সূত্র দাবি করছে, এই সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লাহ গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এখনও ৫০০-রও বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন। কিছু সরকারি আধিকারিক বলছেন, সংখ্যা ১,০০০-এর বেশি হতে পারে। এটা গভীর শোকের মুহূর্ত।”

   

শুক্রবার শ্রীনগরের বখশি স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তাঁর ভাষণ শুরু করেন কিশ্তওয়ার দুর্ঘটনায় মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়ে। আহতদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমাদের দেখতে হবে প্রশাসনের কোনও গাফিলতি ছিল কি না। আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতাম, আরও কিছু ব্যবস্থা কি নেওয়া যেত? মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাদের নিজেদের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে ফোন করে ঘটনাবলী সম্পর্কে খোঁজ নেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চলমান উদ্ধার কার্যক্রমের আপডেট দেন এবং কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, “আমার সরকার এবং এই মর্মান্তিক মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন কেন্দ্র সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।”

Advertisements

বর্তমানে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা বৃহৎ আকারে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। বিপুল পরিমাণ কাদা, পাথর ও ধ্বংসস্তূপ সরাতে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় উদ্ধারকাজে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

প্রশাসনের তরফে গুলাবগড় পদ্দার এলাকায়, যা চাশোটি গ্রাম থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে, একটি কন্ট্রোল রুম ও হেল্পডেস্ক চালু করা হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং তীর্থযাত্রীদের সাহায্যের জন্য নিম্নলিখিত হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে: ৯৮৫৮২২৩১২৫, ৬০০৬৭০১৯৩৪, ৯৭৯৭৫০৪০৭৮, ৮৪৯২৮৮৬৮৯৫, ৮৪৯৩৮০১৩৮১ এবং ৭০০৬৪৬৩৭১০।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির তীব্রতায় নদীর জল হঠাৎ করে বেড়ে যায় এবং কাদা ও পাথরের স্রোত গ্রামে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বহু বাড়িঘর, দোকানপাট, এমনকি রাস্তা ও সেতুও ধ্বংস হয়ে যায়। অনেক পরিবার এখনো নিখোঁজ, যার ফলে গ্রামে শোক ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃত ও আহতদের পরিবারকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী, চিকিৎসা দল এবং অস্থায়ী আশ্রয় শিবির ইতিমধ্যেই দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। তবুও, দুর্গম এলাকা এবং খারাপ আবহাওয়া উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তুলছে।